মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের বেশ কয়েকটি ফজিলতপূর্ন দিন ও রাত দিয়েছেন, যখন ইবাদত করার মাধ্যমে আমাদের পাপমুক্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। আসন্ন শবে বরাতও সেরকম একটি মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ রাত। সমগ্র বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই রাতে শবে বরাতের নামাজ, সাথে কোরআন তেলাওয়াত,দান-সদকা ইত্যাদি বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করেন।
শবে বরাতের নামাজ কয় রাকাত পড়া উচিত এবং এই রাতের ফজিলত, রহমত ও বরকত হাসিল করার জন্য কি কি করনীয় সেই ব্যাপারে অনেকেই দ্বিধাদন্দ্বে ভুগে থাকেন। এছাড়া পবিত্র শবে বরাতের রাতটি উদযাপনের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠান পালনের ঐতিহ্য রয়েছে। তবে লোকসমাজে প্রচলিত কিছু রীতিনীতি ইসলামী শরীয়ত সম্মত নয়। তাই সেগুলো থেকে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বেঁচে থাকা উচিত।
শবে বরাত শব্দের অর্থ কি?
ফার্সি ভাষায় ‘শব’ অর্থ রাত ও ‘বারায়াত’ অর্থ সৌভাগ্য। সেই অর্থে ‘শবে বরাত’ শব্দের অর্থ সৌভাগ্যের রাত। শবে বরাতকে আরবীতে ‘লাইলাতুল বারায়াত’ বলা হয়।আরবিতে ‘লাইলা’ শব্দের অর্থ রাত এবং‘বারাআত’ অর্থ হচ্ছে মুক্তি, সম্পর্কচ্ছেদ, মুক্ত হওয়া বা নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া ইত্যাদি। সুতরাং ‘লাইলাতুল বারাআত’ এর অর্থ হলো মুক্তির রাত বা পাপ কার্যের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার রাত।
শবে বরাতের তাৎপর্য ও ফজিলত
প্রকৃত পক্ষে শবে বরাত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় রাত। এই রাতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাঁর রহমত ও ক্ষমার দরজা খুলে দেন, বান্দাদের গুনাহসমূহ উদারচিত্তে মাফ করেন এবং বিশেষ কিছু ব্যাক্তি ব্যতীত সকল বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দেন। বিভিন্ন সাহাবিদের থেকে বর্ণিত হাদীস শরীফে মহিমান্বিত এই রাতের ফজিলত ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানা যায়।
আরো পড়ুনঃ
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত ও করণীয় আমল
শবে বরাতের নামাজ
পবিত্র কুরআন ও হাদীসে শবে বরাতের নামাজ এর জন্য নির্দিষ্ট কোন রাকাত বা নিয়ম নির্ধারিত নেই। তবে, আপনি নফল ইবাদতগুলো করতে পারেন। বিশেষ করে দুই দুই রাকাত করে প্রতিবার সূরা ফাতিহার সাথে যেকোন সূরা মিলিয়ে পড়বেন। তাই যার যার সাধ্যমতো যত ইচ্ছা নফল সালাত ও তার পাশাপাশি যেকোন ধরনের নফল ইবাদত করা যায়। সব ধরনের নফল ইবাদত এর পর মধ্যরাতে তাহাজ্জুত নামাজ, বেতের তিন রাকাত আদায় করা। সবশেষে, ফজরের সালাত আদায় করে নেওয়া। আর শবে বরাতের নামাজ এর নিয়ত নিচে উল্লেখিত আছে। এটি নামাজের সময় পাঠ করতে হবে।
আর আপনার যদি কাজা নামায থাকে তাহলে সেগুলি এ রাতে আদায় করুন এবং ভবিষ্যতে আর কখনো নামাজ বাদ না দেওয়ার সংকল্প করুন।
শবে বরাতে কি কি আমল করবেন
মহানবী (সা.) ও সাহাবীগণ লাইলাতুল বারাআত অর্থাৎ ১৫ শাবানের রাতে ইবাদত করা ও দিনে রোজা রাখার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেছেন।তাই একজন সাধারণ মুসলমান হিসেবে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করে আমাদের প্রত্যেকের কিছু করণীয় থাকে । মহিমান্বিত শবেবরাত রাতে নিজের ও সকলের জন্য ক্ষমা ও হেদায়েতের জন্য প্রার্থনা করতে ভুলবেন না।
কুরআন তেলাওয়াত করুন: রাসূলুল্লাহ (সা:) এর বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় যে, যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াতে নিজেকে নিমগ্ন রাখে, সে শিঘ্রই আল্লাহ তায়ালার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠে।
আরো পড়ুনঃ
পবিত্র শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
তওবা ও এস্তেগফার করা: আমরা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আল্লাহ তাআলার অসংখ্য হুকুম আহকাম লংঘন করে পাপকাজে লিপ্ত হই। শবেবরাতে মহান আল্লাহ বান্দাদের জন্য ক্ষমার দরজা খুলে দেন। তাই আন্তরিকভাবে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যতে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার দৃঢ় সংকল্প করুন।
ওযু অবস্থায় ঘুমানো: এই রাতে পুরো রাত জেগে ইবাদত করা সম্ভব নাও হতে পারে।তাই সাধ্যমতো ইবাদত বন্দেগী করে ঘুমানোর সময় ওযু করে ঘুমানো উচিত।
অর্থাৎ, লাইলাতুল বরাতের মতো মহিমান্বিত রাতে আমাদের আত্মা আল্লাহপাকের আরশে সিজদা করার সুযোগ হাতছাড়া করার মতো ভুল করা ঠিক নয়।
এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা: রাত জেগে শবে বরাতের নামাজ পড়তে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে ফজর নামায আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়া বিরাট দূর্ভাগ্যের লক্ষণ।তাই নফল ইবাদতের কারণে ফরয নামায যেন ছুটে না যায় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত।
দুআ করুন: নিজের, পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রয়োজনের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন।
যিকির করুন: বস্তুত, লাইলাতুল বারাআত হল আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করার রাত। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এই রাতে কিছু সময় জিকির আযকারে মশগুল হওয়া জরুরি।
দরিদ্রদের সাহায্য করুন: শবে বরাতে সাধ্যমত গরিব ও মিসকীনদেরকে দান সদকা করা বা খানা খাওয়ানো আরেকটি বিশেষ আমল।
কবর যিয়ারত করা: পূর্ববর্তী বুজুর্গদের থেকে ফজিলতপূর্ণ রজনী শবেরাতে পিতা মাতার ও আপনজনদের কবর যিয়ারত করা ও তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করার প্রথা চলে এসেছে। হাদীসে পাকেও এর সমর্থন পাওয়া যায়।
শবে বরাত উপলক্ষে রোজা রাখা:
শবে বরাতে বর্জনীয় কাজসমূহঃ
বরকতময় রাত্রি শবে বরাতে যেসব মানুষকে ক্ষমা করা হবে না সেসব ধরণের কাজ থেকে নিজেকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা।
হাদীসের আলোকে এরা হলো:
১. আল্লাহ তা’আলার সাথে অংশীদার স্থাপনকারী:
২. যে ব্যক্তি কিনা (শত্রুতা) পোষণ করে বা অন্য মুসলমানদের জন্য অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করে।
৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।
৪. যে পুরুষ টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরতে অভ্যস্ত।
৫. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্ধান।
৬. যে ব্যক্তি মদ্যপান করে।
৭. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যাকারী ও আত্মহত্যাকারী ।
কবর যিয়ারতের নামে অযথা মাজারে ঘুরে বেড়ানো বা মোমবাতি জ্বালানো অন্য কোন শরীয়ত বিরোধী কাজ করা। এই রাতে হালুয়া-রুটি বা মিষ্টান্ন তৈরি ও বিতরনকে জরুরি মনে করা। মূলকথা হলো, পবিত্র শবে বরাতে কোন কোন ইবাদত বন্দেগী করতে হবে তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তাঁহাদের মধ্যে নির্দিষ্ট করে বলা দেয়া হয়নি। তবে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করার জন্য তাকীদ ও নির্দেশ করা হয়েছে। তাই যিকির, তওবা-ইস্তিগফারে পুরো রাত্রিই অতিবাহিত করাটাই হওয়া উচিত এই শবে বরাত পালনের মূল উদ্দেশ্য ও অর্জন। সেই সাথে শুধু শবে বরাত নয় সারা বছরই শিরক ও হিংসা থেকে বেঁচে থেকে রাতে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করার অভ্যাস করা দরকার। মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে সঠিকভাবে ইবাদত করার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দান করেন। আমিন
তথ্যসূত্রঃ
https://umrah.com.bd/news/shab-e-barat-meaning-significance-hadith-and-namaz
https://www.learnaboutislam.in/2012/07/prayers-for-shab-e-baraat-namaz-dua-e.html