রমজান ২০২৪ কত তারিখে
প্রতি বছরের মত এবছরও এসে গেছে আমাদের মুসলিমদের সকলের প্রিয় রমজান মাস। এইতো আগামী ১২ই মার্চ ২০২৪ থেকে আমাদের দেশে পবিত্র মাহে রমজান শুরু হতে চলেছে। সৌদির মহাকাশ গবেষনা সংস্থা আমিরাতস এস্ট্রোনোমি সোসাইটি আগে থেকেই ধারনা করেছিল রোজা ২০২৪ সালে মার্চের ১২ তারিখ থেকে শুরু হতে পারে। আর সেটাই সত্যি হল। কেননা, রমজান মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। আর তাই ধারনা করা যায়, ইদ উল ফিতর উদযাপিত হতে পারে আগামী ১০ই এপ্রিল।
ফযিলতপূর্ণ মাস রমাদান
রহমতে পূর্ণ রমজান মাস ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার পক্ষ থেকে এক বিশেষ নিয়ামত ও উপহারস্বরুপ।এই রমজান আল্লাহপ্রিয় মুমিন বান্দার জন্য যেন সৌভাগ্যের এক ডালা নিয়ে আগমন করে, যে ডালায় থাকে অসংখ্য গুনাহ মাফের সুযোগ, তওবা কবুলের সুযোগ, হাজার রাতের সমান ইবাদতের সুযোগ, অগণিত সওয়াব কামানো আর জান্নাতের প্রতিশ্রুতি। সেকারণেই রমজান মাস আসলে রাসূলুল্লাহ সা: ও তার সাহাবিদের মনে খুশির বন্যা বয়ে যেত। তারা ২/১ মাস আগে থেকেই রমজানের প্রস্তুতি শুরু করে দিতেন। আসুন, আজকে এই অসাধারণ ফযিলতপূর্ণ রমজান মাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।
আরো পড়ুনঃ
ইসলামে যাকাত দেয়া কতোটা গুরুত্বপূর্ণ
সিয়াম শব্দের ইসলামিক অর্থ কি?
মুমিনদের জন্য রমজান মাসের রোযা রাখা ফরয ঘোষণা
সুরা বাকারার আয়াতটি থেকে আরো জানা যায় যে আগের যুগের মুসলমানরাও অর্থাৎ পূর্ববর্তী নবীদের উম্মত রোজাকে ফরয ইবাদাত হিসেবে পালন করে গেছেন। আল্লাহর রাসূল (সা:) যে বছরে তার সাহাবীগণকে নিয়ে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন তার পরের বছর থেকে অর্থাৎ হিজরি দ্বিতীয় সনে রমজান মাসের ফরজ রোযা রাখা শুরু করেন।
কুরআন নাযিলের মাস
রমজান মাসের এত গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য এর অন্যতম কারন হল একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ও বরকতময় রাত, যেই রাতে সমগ্র আল কূরআন নাযিল হয়। সেই রাতকে বলা হয় লাইলাতুল কদর। তবে রমজান মাসের কোন দিনটি লাইলাতুল কদরের রাত তা রাসূলে পাক (সা:) নির্দিষ্ট করে বলে যাননি। তবে তিনি মাসটির শেষ দশটি রাতে তা সন্ধান করতে বলে গেছেন।
এ রাতকে সুনির্দিষ্ট না করার পিছনে রয়েছে গভীর তাৎপর্য। বান্দা একটানা দশদিন ব্যপী আল্লাহর ইবাদত করতে থাকবে, আল্লাহর নৈকট্য ও ক্ষমা লাভের আশায়। লাইলাতুল কদরের রাতগুলো কাছে এলে রাসূল (সা:) একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে যেতেন, শেষ দশদিন ইতিকাফে বসে যেতেন।
লাইলাতুল কদরের রয়েছে বিশেষ ফযিলত এবং বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য –
- এ রাতে মানবজাতির হিদায়াতের জন্য পথপ্রদর্শকস্বরূপ মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।
- পবিত্র কোরআনে ক্বদর নামক সূরায় লাইলাতুল কদর এর কথা বলা হয়েছে। সেই সুরায় লাইলাতুল কদর এর রাতকে আল্লাহপাক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করেছেন।
- এ রাতে ফেরেশতাগণ রহমত,বরকত ও কল্যান নিয়ে অবতরণ করেন।
- নবিজী সা: এ রাতগুলোতে ইবাদত-বন্দেগিতে এত বেশি সময় ও শ্রম দিতেন যা অন্য কোন রাতে দেখা যেত না।
- এ রাত দুয়া কবুলের জন্য বিশেষ ক্ষণ।
মহান আল্লাহর কাছে একজন রোযাদারের মর্যাদা অনেক। রমজান মাসের এই ফরজ রোযা পালনে কত সওয়াব হতে পারে তা আল্লাহ তায়া’লা স্বয়ং নিজেই নির্ধারণ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অন্য ইবাদাতসমূহে সওয়াবের পরিমান দশগুণ থেকে সাতশোগুন পর্যন্ত হয়ে থাকে, কিন্তু রোযাদারের সওয়াব কত হবে সেটি শুধু আল্লাহপাকই জানেন।
গুনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার সূবর্ণ সুযোগ এই মাসে
একজন আল্লাহ ভীরু বান্দা সারাবছর অধীর আগ্রহে পবিত্র রমজান মাসের জন্যই অপেক্ষা করে নিজের অতীত গুনাহ মাফের আশায়। কারন রমজান মাস মাগফিরাতের মাস। কোন মুসলমান যদি একনিষ্ঠতার সাথে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই রোযা পালন করে, তবে দয়াময় আল্লাহ তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেন।
এছাড়াও রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের রাতগুলোতে অনুশোচনাকারী বান্দার প্রচুর গুনাহ মাফ হওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।আল্লাহর রাসুল (সা:) তাই এই দিনগুলোতে উম্মাতকে বেশি করে গুনাহ মাফ চাইতে বলেছেন। রমজানের শেষ দশকের দিনগুলোতে পড়ার জন্য তিনি একটি বিশেষ দুয়া শিখিয়ে গেছেন।
দুয়া কবুলের মাস রমজান মাস
ছোটকাল থেকেই মা বাবা বলতেন ইফতারের সময় যেকোন দুয়া কবুল হয়। কথাটা ছোট্ট মনে গেথে গিয়েছিল যা বড় হওয়ার পরেও অভ্যাস রয়ে গেছে। সত্যিই তাই, একজন রোযাদারের জন্য সাহরি ও ইফতারের দুটি সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ দুয়া কবুলের জন্য। সাহরি খাওয়ার পূর্বে আল্লাহর অনেক প্রিয় বান্দাই সালাতুত তাহাজ্জুদ এর নামাজ পরে থাকেন,এই সময়ও দুয়া কবুলের উপযুক্ত সময়। মহানবী স: বলেছেন, রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলমান আল্লাহর সমীপে দুয়া করে, আর তা কবুল হয়ে যায়।(মুসনাদে আহমাদ)
জান্নাতের প্রতিশ্রুতি আছে রোযাদারদের জন্য
রোযাদারের জন্য জান্নাতকে প্রতিদিন সাজানো হয়।এমনকি কবরের আযাবও একমাস বন্ধ করে রাখা হয়।
ফলশ্রুতিতে এই মাসে মুমিনগণ শয়তানের ওসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকেন এবং বেশি বেশি নেক আমল ও ইবাদতের দিকে ঝুকে পড়েন।যারা সারাবছর মসজিদে নিয়মিত যান না তারাও মসজিদমুখী হন। হাদিসে আছে, জান্নাতের ‘রাইয়্যান’ নামক একটি বিশেষ দরজা রয়েছে যেটা দিয়ে শুধুমাত্র রোযাদারগণই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া রোযাদারের সর্বশেষ্ঠ পুরষ্কার জান্নাতে মহান আল্লাহ তায়া’লার সাথে সাক্ষাৎ যা পূর্বেই বলা হয়েছে।
রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল
রমজান মাসে বিশেষ কি কি আমল মহান আল্লাহর দরবারে পছন্দনীয় হবে তা জানার জন্য রাসূলুল্লাহ সা: ও তার সাহাবিদের জীবনীগুলো বেশি করে পড়া উচিত।
- সময়মতো সাহরী ও ইফতার করা। সাহরী খাওয়ার মধ্যে রয়েছে প্রচুর কল্যান ও বরকত। এটা নিয়ে অসংখ্য হাদিস রয়েছে।
- তারাবী ও প্রত্যেক সাহরীর সময়ে তাহাজ্জুদ এর নামাজ পড়া। এই সময়ে অনেক বেশি দুয়া কবুল ও গুনাহ মাফ হয়ে থাকে।
- বেশি করে কুরআন তেলাওয়াত করা। আমাদের দেশে রমজান আসলে কুরআন খতম দেয়ার (অর্থ না বুঝে) একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। অর্থ বুঝে অধ্যয়ন করাকে গুরুত্ব দেয়া হয়না। অথচ, এই কুরআন আমাদের জন্য জীবন বিধান হিসেবে নাযিল হয়েছে, আমাদের হেদায়াতের জন্য পথনির্দেশনা। তাই রমজান মাসে বেশি করে কুরআনের তাফসির অধ্যয়ন বা কুরআন শিক্ষার যেকোনো আলোচনা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা উচিত। রাসুল ও সাহাবী গণ সাহরীর সময়েও প্রচুর কোরআন পড়তেন।
- জিকির ও দুয়া করা। সাহরী ও ইফতারের সময়, তাহাজ্জুদ নামাজের পর ও সারাদিন রোযাবস্থায় যেকোনো কাজ করতে করতেই আল্লাহর যিকির গুলো করা যায়। দুয়া কবুলের সময়ে কোরআন ও হাদিস দেখে দুয়া করা।
- গুনাহ মাফ চাওয়া। রমজান মাসের প্রতিটি দিনে ও রাতে প্রচুর মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় ও গুনাহ মাফ করা হয়ে থাকে।(মুসনাদে আহমাদ)। বিশেষ করে লাইলাতুলকদর এর দিনগুলোতে বেশী করে মাফ চাওয়া।
- দান করা। এই মাসে দান করার সওয়াব অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি।
- রোযাদারকে ইফতার করানো। একজন রোযাদারকে ইফতার করালে তার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। দুস্থ রোযাদারকে সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতার করানো।
- ছোট ছোট গুনাহের কাজ থেকেও বিরত থাকার চেষ্টা করা।
এছাড়াও রমজান মাসকে নিজের আত্মশুদ্ধির ট্রেনিং মাস ধরে সকল নেক কাজ ও অভ্যাসের অনুশীলন করা ও বদঅভ্যাসগুলো বদলে ফেলার চেষ্টা করা।
রমজানের রোযা না রাখার পরিনাম
রমজানের রোযা রাখার যেমন রয়েছে অনন্য ফযিলত, তেমনি কোন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মুসলমান কোন শরয়ী কারন ব্যতিত রোযা না রাখলে তা আল্লাহর কাছে জঘন্যতম গুনাহের কাজ। এর জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।
আমাদের দুনিয়া ও মৃত্যুর পরের জীবনের ভাল ফলাফলের জন্য রমজান খুব গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মহৎ ও পবিত্র মাসের জন্য তাই ইসলাম প্রিয় মুমিনরা সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে।রমজান মাসের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে।
তথ্যসূত্রঃ
https://www.timeanddate.com/holidays/bangladesh/ramadan-begins
https://www.islamicfinder.org/special-islamic-days/ramadan-2024/