শবে বরাতের নামাজ কয় রাকাত? শবে বরাতের কি কোনো নির্দিষ্ট নামাজ রয়েছে? শবে বরাতের নামাজের নিয়ত কি হবে? প্রত্যেক বছর শবে বরাতের সময় এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খায় অনেকের মনে। আসুন জেনে নিন আপনার প্রশ্নের উত্তরগুলো।
শব’ শব্দের অর্থ ‘রাত’ আর ‘বরাত’ হচ্ছে ‘ভাগ্য বা সৌভাগ্য’। অর্থাৎ শবে বরাতের মানে হচ্ছে সৌভাগ্যের রাত। বলা হয়, এ রাতে মহান আল্লাহ তার ঈমানদার ব্যাক্তির গুনাহ মাফ করেন। তাই এ রজনীকে আরবিতে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা নিষ্কৃতি/মুক্তির রজনীও’ বলা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে এই বিশেষ দিন শবে বরাত, দক্ষিণ এশিয়ায় নিসফ শাবান, আবার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও তুর্কিতে নিসফু সায়া নামে পরিচিত।
ফযিলতপূর্ণ মাস রমাদান সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন।
শবে বরাত কবে
আরবি শাবান মাসের ১৫ তারিখে শবে বরাত পালিত হয়। শাবানের এই পঞ্চদশ রাত মুসলিমদের কাছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি বিশেষ রাত। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের হিসেবে ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শবে বরাত হতে পারে। এটি সম্ভাব্য তারিখ। কারণ ইসলামিক দিবস চাঁদের উপর নির্ভর করে।
শবে বরাতের তাৎপর্য
হাদিসে শবে বরাত সম্পর্কিত অনেক তথ্য পাওয়া যায়। এর থেকে এই রাতে করণীয় আমল সম্পর্কেও অনেকটা ধারণা পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ
ইসলামে যাকাত দেয়া কতোটা গুরুত্বপূর্ণ
সিয়াম শব্দের ইসলামিক অর্থ কি?
শবে বরাতের প্রমাণ
হাদিসের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও বিশুদ্ধ ছয়টি হাদিসকে সিহাহ সিত্তা বলে। এর মধ্যে প্রথম ও প্রধান দুটি হাদিস শরীফ বুখারি ও মুসলিম এ শবে বরাত সম্পর্কিত কোনো হাদিস পাওয়া যায় না।
মূলত, শবে বরাত সম্পর্কে ইমামদের ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়। তাই এ রাতে বিশেষ কোনো আমল না করে ব্যক্তিগতভাবে নিজ গৃহের মধ্যে নামাজ, দোয়া, যিকির, তওবা বা ইস্তেগফারে মশগুল থাকা উত্তম।
শবে বরাতের নামাজ
শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোনো নামাজ নেই। অনেকেই শবে বরাতের নামাজ হিসেবে ১০০ রাকাত নামাজ পড়ে থাকেন যা সম্পূর্ণ বিদাআত। সাধারণ নিয়মেই নফল নামাজ আদায় করা হয় এই রাতে। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে ও এই রাতে বিশেষ কোনো নামাজ পড়তে দেখা যায়নি। নিষিদ্ধ সময় ব্যাতিত রাতের যেকোনো সময় আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী নফল নামাজ পড়তে পারেন। তা হতে পারে ২/৪/৬/৮/১০/১২/১৪ বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক রাকাত। তবে বেশি আমল এর চেয়ে সহিহ আমলের দিকে অবশ্যই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।
এক্ষেত্রে নফল নামাজ পড়ার জন্য আপনি প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে কোরআন শরীফের যেকোনো সূরা বা ফজিলত পূর্ণ আয়াত ইচ্ছামত পড়তে পারেন।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত
শবে বরাতে নফল নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা করে নামাযের মধ্যে নিয়ত না করলেও চলে। মন থেকে এমন ভাব আনলে বা ইচ্ছা পোষণ করলেই চলে। কারণ প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত।
নামাজের মধ্যে আরবি বা বাংলায় নিয়ত করলেও সমস্যা নেই।
শবে বরাতে রোজা
অন্যান্য আমল
যেহেতু শবে বরাতকে নিষ্কৃতি বা মুক্তির রাত বলা হয় তাই আমাদের সবার উচিত এই রাতে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ ও গুনাহ মাফের জন্য ইবাদাতে মগ্ন থাকা। নফল নামাযের পাশাপাশি আরো অনেক আমল রয়েছে যা আমরা শবে বরাতে করতে পারি। নিচে শবে বরাতে করা যায় এমন কিছু আমল উল্লেখ করা হলঃ
এছাড়া নিম্নে আরো কিছু ছোট ছোট দোয়া উল্লেখ করা হল যেগুলো শবে বরাতে বেশি বেশি পড়া যেতে পারে:
বর্জনীয়
আমাদের মধ্যে অনেক কম ইসলামিক জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ এই রাতে কুসংস্কার ও অসচেতনতায় বিভিন্ন উৎসব চর্চায় মেতে উঠেন। যা একদমই বর্জনীয়। এর মধ্যে রয়েছেঃ
- ফরজ নামাজ রেখে সুন্নত ও নফলকে অত্যাধিক গুরত্ব দেওয়া।
- আতশবাজি ফোটানো
- হালুয়া-রুটি তৈরিতে ব্যাস্ত থাকা।
- ঘরবাড়ি বা মসজিদ আলোকসজ্জা করা
- জেনে শুনে ক্ষমার অযোগ্য পাপ করা
শবে বরাত একটি পবিত্র রাত। প্রত্যেক মুসলমান বান্দার উচিত এই রাত ইবাদাত – বন্দেগীর মাধ্যমে কাটানো। তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত নফল ইবাদাত করতে গিয়ে ফরজ যেন না ছুটে যায়। সারা রাত জেগে আমল করতে গিয়ে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তাই আগে ফরজ নামাজগুলো আদায় নিশ্চিত করতে হবে। পরিশেষে এটাই কাম্য, মহান আল্লাহতালা যেন পবিত্র এই রাতে তার প্রত্যেক বান্দাকে হেদায়ত দান ও পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে নতুন করে সৎৎ, ন্যায়নিষ্ঠ ও ইসলামিক জীবন যাপনের তৌফিক দান করেন।
তথ্যসূত্রঃ
https://zamzam.com/blog/shab-e-barat/
https://umrah.com.bd/news/shab-e-barat-meaning-significance-hadith-and-namaz