ব্যাবসা ও মার্কেটিং দুটি শব্দ যেন একে অপরের পরিপূরক। কারণ, যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের একটি পার্ট হচ্ছে instagram marketing. দ্রুতগতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঝড়ের গতিতে পণ্যের প্রচার প্রচারণা করা যায় প্রযুক্তির কল্যাণে। তাই এখন বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মার্কেটিং করা যায় অতি সহজে। এরমধ্যে ইনস্টাগ্রাম হচ্ছে মার্কেটিং করার জনপ্রিয় মাধ্যম।
ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো, ঘরে বসে অসংখ্য ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের কাছে পণ্যের প্রচার প্রচারণা করা। মার্কেটিং এর জন্য পণ্য বা ব্যাবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন images, videos বা Text content ব্যবহার করা হয়। ব্যবসার উন্নতির ক্ষেত্রে মার্কেটিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। তাই আজকে ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আলোচনা শুরু করি।
ইনস্টাগ্রাম কি?
ইনস্টাগ্রাম (Instagram) হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। যেখানে ছবি, টেক্সট এবং ভিডিও শেয়ারের মাধ্যমে মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে। ভিজুয়াল কনটেন্ট ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে ইনস্টাগ্রাম অন্যতম। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে Kevin Systrom এবং Mike Krieger নামে দুইজন ব্যক্তি ইনস্টাগ্রাম তৈরি করে। পরে ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ২০১২ সালে ফেসবুক ইনস্টাগ্রামকে কিনে নেয়। ফেসবুকের পরেই দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ইনস্টাগ্রাম। বর্তমানে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম দুটোই মেটা কোম্পানির আওতাভুক্ত।
ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং কি?
ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে যেকোনো পণ্য, সেবা অথবা প্রতিষ্ঠানের প্রচার প্রচারণা চালানোই হচ্ছে instagram marketing. লক্ষ লক্ষ ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের কাছে আপনার পণ্য বা সেবাকে পৌঁছে দিতে পারবেন খুব সহজে। এর জন্য আপনাকে অফলাইনের মতো কষ্ট করতে হবে না৷ ঘরে বসেই মার্কেটিং কাজ সম্পাদন করতে পারবেন। দূর দুরন্তের মানুষের কাছে আপনার ব্যাবসাকে তুলে ধরুন ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং এর মাধ্যমে।
ধরুন, আপনার একটি কসমেটিকের দোকান আছে। এখন বিভিন্ন কসমেটিক সামগ্রির ছবি তুলে দাম সহ প্রডাক্টের ডিটেইল লিখে ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্টে পোস্ট করলেন। তারপর পোস্ট দেখে বহু মানুষ আপনার প্রডাক্টের সাথে পরিচিত হয়ে গেলো। এটাই হলো ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং। আশা করি, ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং কি বুঝতে পারছেন।
ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট তৈরি করার নিয়ম
সঠিক নিয়মে একটা প্রফেশনাল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট তৈরি করার নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো।
Step-1: প্রথমে যেকোনো স্মার্টফোন বা কম্পিউটার থেকে ব্রাউজার ওপেন করবেন। তারপর www.instagram.com এই লেখাটি টাইপ করে ইন্টারে ক্লিক করবেন। তারপর আপনি সরাসরি ইনস্টাগ্রামের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চলে যাবেন।
Step-2: ইনস্টাগ্রামের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য অনেকগুলো অপশন পেয়ে যাবেন। আপনি চাইলে ফেসবুক আইডি, ফোন নাম্বার কিংবা জিমেইল আইডি দিয়েও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবেন। তবে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট জিমেইল আইডি দিয়ে খোলাই ভালো। জিমেইল আইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে চাইলে Sing up অপশনে ক্লিক করুন। তারপর জিমেইল অ্যাড্রেস ও পাসওয়ার্ড দিয়ে খুব সহজেই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। আবার একই নিয়মে ইনস্টাগ্রাম অ্যাপ দিয়েও অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবেন।
Make A Professional Instagram Profile
instagram marketing করার জন্য অ্যাকাউন্ট প্রফেশনাল বানানোর উপায় নিচে তুলে ধরা হলো।
- বিজনেস জিমেইল ব্যবহার করে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট তৈরি করা।
- ব্যবসার উদ্দেশ্য অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় বিজনেস বা কোম্পানির নাম ব্যবহার করা।
- প্রোফাইলে কোম্পানির নামসহ ছোট একটি Username দেওয়া।
- একটি প্রোফাইল পিকচার আপলোড করতে হবে এবং পিকচারটিতে কোম্পানির লোগো ব্যবহার করা জরুরি।
- সবশেষে নতুন অ্যাকাউন্টটি বিজনেস অ্যাকাউন্টে রুপান্তর করতে হবে।
ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল প্রফেশনাল করা কেন জরুরি?
ব্যবসার উন্নতির পিছনে মার্কেটিং বড় ভূমিকা রাখে। তাই ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধি করার জন্য মার্কেটিংয়ের বিকল্প নেই। এটা সম্পর্কে আপনার হয়তো সবাই অবগত। এখন কথা হচ্ছে, ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল প্রফেশনাল করা কেন জরুরি?
শুনুন, একটা দোকানের মালামাল ফুটিয়ে তোলার জন্য, আগে দোকানের ডেকোরেশন করা প্রয়োজন। ডেকোরেশন ছাড়া দোকান পাতাহীন গাছের মতো। কারণ, ডেকোরেশনের কারণেই দোকানের প্রডাক্ট গুলো ফুটে ওঠে ফুলের মতো।
অনলাইনের ব্যবসার ক্ষেত্রে এরকম ডেকোরেশন এর দরকার আছে। তবে অফলাইনের এর চেয়ে অনলাইন পুরাই ভিন্ন। অনলাইনে আপনার প্রোফাইলটি সুন্দর করে সাজানো মানেই ডেকোরেশন করা। এতে আপনার প্রডাক্টের কোয়ালিটি বৃদ্ধি পাবে। আর আপনার প্রডাক্টের উপর মানুষ আস্থা পাবে। এর জন্যই ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল প্রফেশনাল করা জরুরি।
ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং কেন করবো?
ব্যবসার প্রচার বাড়াতে মার্কেটিংয়ের করতেই হবে। কারণ, মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রডাক্ট মানুষের কাছে পরিচিতি পায়। আর বর্তমানে অনলাইন মার্কেটিং ব্যবসার প্রচার প্রচারণা বাড়ানোর বড় মাধ্যম। আর ইনস্টাগ্রামে রয়েছে বিলিয়ন ইউজার। আর এই ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে আপনার প্রডাক্ট পৌঁছে দিতে পারবেন ঘরে বসে। তাই ব্যবসার ক্ষেত্রে instagram marketing এর জুড়ি নেই।
তাছাড়াও আমেরিকার প্রায় ৭১% এর বেশি Business Owner-রা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে৷ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে চাইলে বাহিরের দেশের মানুষদের সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। আর বাহিরের দেশের অধিকাংশ মানুষই ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে। তাই সবদিক বিবেচনায়, অনলাইনে ব্যাবসা করতে চাইলে ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং ছাড়া উপায় নেই।
instagram marketing কত প্রকার?
ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং করার আগে অবশ্যই এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানা জরুরি। ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং সাধারণত দুই প্রকার।
যথা:
- Free Instagram Marketing
- Paid Instagram Marketing
ফ্রিতে মার্কেটিং করতে হলে কৌশলে আপনাকে শ্রম ও সময় ব্যয় করতে হবে। আর পেইডে মার্কেটিং করলে খুব দ্রুতই কাঙ্ক্ষিত কাস্টমারের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। তবে ফ্রিতে মার্কেটিং করে পরিচিত লাভ করতে পারলে, আপনার ব্যাবসা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। কারণ, ফ্রিতে আপনি কোনো টাকা ইনভেস্ট ছাড়ায় আপনার পণ্যকে ছড়িয়ে দিতে পারবেন। আর পেইড মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে টাকা ইনভেস্ট বন্ধ করে দিলে মার্কেটিং ও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই একবার ফ্রিতে মার্কেটিং করাতে পারলে আপনার ব্যবসার উন্নতি হতেই থাকবে।
ফ্রিতে ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং করার উপায়
সময় ও শ্রম ব্যয় করা ছাড়া ফ্রিতে মার্কেটিং করা প্রায় অসম্ভব। ফ্রিতে মার্কেটিং করতে হলে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। অনেকের ফ্রিতে মার্কেটিং করার কৌশল সম্পর্কে অজানা। তাই নিচে ফ্রিতে instagram marketing করার উপায় উল্লেখ করা হলো।
ফলোয়ার বৃদ্ধি করা: ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে প্রোফাইলে ফলোয়ার বৃদ্ধি করা হচ্ছে প্রথম কাজ। কারণ, প্রোফাইলের ফলোয়ার হচ্ছে মার্কেটিংয়ের হাতিয়ার। প্রোফাইলে যত বেশি ফলোয়ার বৃদ্ধি করতে পারবেন, তত বেশি মার্কেটিংয়ে এগিয়ে যাবেন। ধরুন, আপনার ইনস্টাগ্রামে মাত্র ১০ জন ফলোয়ার। এখন আপনি মার্কেটিং করলে ১০ জনের কাছে আপনার প্রডাক্ট পৌঁছে যাবে। আর যদি ১০০০০ ফলোয়ার হয়, তাহলে ১০০০০ হাজার মানুষের কাছে আপনার প্রডাক্ট পৌঁছে যাবে। তাই ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং করতে হলে ফলোয়ার বৃদ্ধি করতেই হবে।
সুন্দর ক্যাপশন লেখা: ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ক্যাপশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্যাপশন দেখেই আপনার কোম্পানি বা বিজনেস সম্পর্কে মানুষ ধারণা পাবে৷ এর জন্য আপনাকে ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং করার সময় শব্দচয়ন নির্বাচন করে, টার্গেট অডিয়ান্সের কথা মাথায় রেখে ক্যাপশন লিখতে হবে।
হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা: আপনার ব্রান্ডের সাথে প্রাসঙ্গিক এমন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন, ইনস্টাগ্রামে হ্যাশট্যাগ রিচ বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। একটি পোস্টে সর্বোচ্চ ৩০টি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ৫ থেকে ৯টি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করাই ভালো।
ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত অ্যাক্টিভ থাকা: ফলোয়ার বৃদ্ধির পাশাপাশি ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত অ্যাক্টিভ থাকতে হবে। কারণ আপনি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট করে যদি অ্যাকাউন্টে সক্রিয়ই না থাকেন, তাহলে কোনো লাভ নেই। আপনাকে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিয়মিত বিজনেস সম্পর্কিত পোস্ট করতে হবে। আবার ব্যবসার সাথে রিলেটেড নয়, এমন কোনো পোস্ট করা যাবে না।
ফলোয়ারদের প্রতি সচেতন হওয়া: আপনার মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন পোস্টে ফলোয়াররা লাইক, কমেন্টস করবে। এদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের কমেন্টস গুলোর গুরুত্ব সহকারে রিপ্লাই দিতে হবে। তাছাড়াও ফলোয়ারদের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে আপনার ব্যবসার প্রতি তাদের বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি পাবে।
পেইডে ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং করার উপায়
অল্প সময়ে হাজার মানুষদের কাছে পেইড প্রমোশনের মাধ্যমে instagram marketing করতে পারবেন। পেইড মার্কেটিং করে খুব অল্প সময়েই পরিচিতি লাভ করা যায়। পেইড ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো যায় খুব দ্রুত। এতে আপনার ফলোয়ার নয়, এমন অনেক মানুষদের কাছেও আপনার কোম্পানি বা বিজনেসের প্রচার হয়ে যাবে। তবে আপনাকে পেইড মার্কেটিং ক্ষেত্রে ইনস্টাগ্রাম কোম্পানিকে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করতে হবে। পেইড মার্কেটিং এর মাধ্যমে টার্গেট করে ১ লাখ/ ২ লাখ মানুষের কাছে মার্কেটিং করতে পারবেন।
শেষ কথা
এতক্ষণ ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা, করি আজকের আলোচনা আপনাদের বুঝতে কোনো অসুবিধা হয়নি। তারপরও যদি কারো বুঝতে অসুবিধা হয়, তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিন। ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।