সিজারের পর যে ৮ ধরনের খাবার খাওয়া উচিত না!

আমার বান্ধবী প্রমির কিছুদিন আগেই সিজার হয়েছে। সিজারের পরপরই সে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়েই অনেকগুলো তেতুলের আচার খেয়ে ফেলেছিল। ফলে, প্রমির আচমকা অনেক অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তারের কাছে ব্যাপারটা জানানোর পর ডাক্তার প্রমিকে বলে দেয় যে সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না। তাই সকল মাকেই সিজারে পরবর্তী সময়ে কঠোর সচেতনতা মেনে চলা উচিত। আসুন তবে আজকের এই আর্টিকেল থেকে জেনে নেই, সি-সেকশন কি, সি-সেকশনের পর মায়ের যত্ন কিভাবে নিতে হবে, সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না এবং সিজারের পর পুষ্টিকর খাবার কি কি খাওয়া উচিত সম্পর্কে।  

সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না

সি-সেকশন কি? 

সিজার বা সি-সেকশন হলো মায়ের তলপেট ও জরায়ুর দেয়াল কেটে বাচ্চা প্রসব করার একটি আধুনিক চিকিৎসা প্রক্রিয়া। অনেক ক্ষেত্রে মা এবং বাচ্চার স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সিজার করা সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম।আর তাই বর্তমান সময়ে নিরাপত্তার জন্যই সিজার এতো জন বহুল।

আরো পড়ুনঃ

টনসিল রোগীর নিষিদ্ধ খাবার

খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কি বেড়ে যায়?

সি-সেকশন কি?

সি-সেকশনের পর মায়ের যত্ন কিভাবে নিতে হয়?  

সিজার একটি নারীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অপারেশন । বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাকৃতিক উপায়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার বিকল্পে সিজারের সাহায্যে নবজাতকের জন্ম দিয়ে থাকে। তবে সিজার পরবর্তী সময়ে সঠিক যত্ন কিভাবে নিতে হয় সে ব্যাপারে অনেকের স্পষ্ট ধারণা নেই। সন্তান প্রসবের আগে ও পরে সিজারিয়ান মায়ের যত্ন সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী।

সিজারের পর প্রথম ৬ সপ্তাহ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। কমপক্ষে ৩ দিন পর গোসল করতে হবে। গোসলের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন সেলাইয়ের জায়গা না ভেজে । সেলাইয়ের যায়গায় বার বার ভিজলে সেলাই তাড়াতাড়ি শুকাবেনা ।যদি সেলাইয়ের যায়গায় উঁচু হয়ে ওঠে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে ক্রিম লাগাতে হবে। পরবর্তী ১ বছর পর্যন্ত কোনো ভারী কাজ করা যাবে না। কোন প্রকার ব্যায়াম করা যাবে না। তবে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করা যাবে। যেহেতু সিজার একটি বড় অপারেশন তাই সিজারের ক্ষত সারানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রয়োজন মত ঘুম এবং বিশ্রাম প্রয়োজন। ঘুমানোর সময় বাম দিকে সোয়া এবং পরবর্তী ৬ মাস সেই নিয়ম অনুযায়ী শুতে হবে। ঠান্ডা বা এলার্জি থাকলে আগেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কারণ ঠান্ডা জনিত সমস্যার কারণে বারবার হাঁচি বা কাশি হলে সেলাইয়ের জায়গায় ব্যথা হতে পারে। সিজারের পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ নারীর পা ফুলে যায়। এজন্য খেয়াল রাখতে হবে এ সময় পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে ঘুমালে পা ফোলা কমে আসবে। সিজারিয়ান সেকশন এর পরবর্তী সময়ে একজন নারীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হয়। তাই এ সময়ে মায়ের সঠিক যত্ন এবং বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত জরুরী । শুধু তাই নয়, সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না এ সম্পর্কে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে। নিচে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি,  তবে আপনি যদি একজন সিজারিয়ান মা হয়ে থাকেন তাহলে ডাক্তার আপনার শরীরের অবস্থা বুঝেই বলে দিবেন যে সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না। তাই, অবশ্যই  আপনার খাবার তালিকা একজন গাইনী বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নিবেন।

সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না

সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না?

টক ও মসলাজাত খাবার : অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সিজারিয়ান মায়ের এ ধরনের খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকাই উত্তম ।টক খেতে কার না ভালো লাগে। তবে অতিরিক্ত টক খেলে এটি ঔষধ এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে । অতিরিক্ত টক খেলে ওজন অধিক পরিমাণে কমে যাওয়া, পেটে আলসার ও গ্যাস্ট্রিক সহ অ্যালার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া রক্তের গতিকে বৃদ্ধি করে উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় । তাই এ সময় টক জাতীয় খাবার হতে বিরত থাকতে হবে।

ফাস্ট ফুড: সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়ানো এই দুনিয়ায় খুব শক্ত করেই শিকড় গেড়েছে ফাস্টফুড। আধুনিক জীবনে ফাস্টফুডের কদর খুব বেশি। অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড গ্রহনে স্বল্পমেয়াদী এবং ভয়ঙ্কর দীর্ঘমেয়াদী নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও এই খাবারের প্রচুর পরিমানে চর্বি রয়েছে। সিজারিয়ান মায়ের জন্য এই সময়ে ফাস্টফুড অস্বাস্থ্যকর। তাই ফাস্টফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ।

ভারী খাবার  এবং ভাজা-পোড়া : সিজার পরবর্তী সময়ে কোমল পানীয় এবং নরম খাবার থেকে শুরু করে খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। সিজার পরবর্তী 40 দিন হজম শক্তি কম থাকার কারণে নরম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত ।এ সময় শক্ত খাবার বা ভাজাপোড়া খাবার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় ।তাই ভাজা-পোড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

ভাজা-পোড়া খাবার শুধু অপ্রয়োজনীয় ওজন বাড়ার ঝুঁকি বাড়ায় না, বরং এই খাবার সাধারণত মশলা, সস, প্রক্রিয়াজাত মাংস যুক্ত থাকে।এমনকি এটি গ্যস্ট্রিকের  সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই উপাদানগুলির কোনটিই আপনার জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। যদি আপনি সম্প্রতি একটি সিজারিয়ান সেকশন করে থাকেন, তাহলে এগুলি পরিত্যাগ করুন।

 চা-কফি: চা-কফিতে আছে কাফেইন নামক উপাদান। এই উপাদান যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তেমনি ক্ষতিকরও।তাই অতিরিক্ত ক্যাফেইন পানে ব্যাক্তি মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চা-কফি মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট নিউরনকে বিপরীত মুখী করে মানুষকে ঘুম থেকে বিরত রাখে ।যা মানসিক স্বাস্থ্যের বিঘ্ন ঘটায় ।প্রসূতি মায়ের চা কফি খাওয়ার ফলে বাচ্চা মায়ের দুধ গ্রহণের ফলে কাফেইন উপাদান বাচ্চার মস্তিষ্কে একইভাবে বিচরণ করবে ।ফলে বাচ্চার মস্তিষ্ক এবং ঘুম বিচ্ছিন্নতার ফলে বাচ্চা অসুস্থ হতে পারে।তাই এ সময়ে অতিরিক্ত চা কফি পান রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায় । যা একজন প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ।

কাঁঠাল: সি-সেকশনের পরে প্রাথমিক সপ্তাহগুলিতে কাঁঠাল খাওয়া এড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়। কাঁঠাল খাওয়ার ফলে পেট খারাপের মতো হজম সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে, যা সি-সেকশনের সাথে যুক্ত। এতে করে  অস্বস্তি লাগতে পারে এবং  এটি ব্যথাকে আরও তীব্র করে তোলে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, প্রসবের পরে কাঁঠাল অম্লতা সৃষ্টি করতে পারে। কাঁঠাল খাওয়া আপনার নবজাতকের মধ্যে কোলিকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। অতএব, প্রসবের পরে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাঁঠাল খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ঠান্ডা খাবার: যাদের সি-সেকশন কিছুদিন আগেই হয়েছে তারা ঠাণ্ডা খাবার এড়িয়ে যাওয়াই উচিত, কারণ এগুলো আপনার রক্ত প্রবাহকে ব্যাহত করতে পারে। এক্ষেত্রে  ঠান্ডা খাবার সর্দি বা কাশি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। অতএব, সিজারের পরে, ঠাণ্ডা দই, আইসক্রিম, আইস কিউব-লোডেড পানীয় ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।

কম রান্না করা খাবার: ঠিক যেমন গর্ভাবস্থায়, আপনাকে অবশ্যই কাঁচা খাবার খাওয়ার অভ্যাসকে দূর করতে হবে, তেমনি সিজারের পর ও আপনাকে কম রান্না করা খাবার বাদ দেওয়া উচিত। যেমন কম রান্না করা ডিম এবং কাঁচা মাংস, বদহজম এবং অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা সি-সেকশনের দাগ নিরাময়ে আরো দেরী  করে।

ডিম এবং দুধ: যদিও দুধ এবং ডিমকে পুষ্টিকর খাবারের অন্যতম হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে এগুলো সব সিজারিয়ান মায়ের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। কিছু মহিলাদের জন্য, ঠান্ডা দুধ পেটে ব্যথা হতে পারে এবং উষ্ণ দুধ অ্যাসিডিটির কারণ হতে পারে। আপনি যদি নতুন মা হন তবে আপনার জন্য দুধ হজম করাও কঠিন হতে পারে।  

সিজারের পর পুষ্টিকর কি কি খাবার খাওয়া যেতে পারে?

সিজারের পর পুষ্টিকর কি কি খাবার খাওয়া যেতে পারে?

সিজারের 24 ঘন্টা পর একজন মা স্বাভাবিকভাবে খাদ্য গ্রহণ শুরু করতে পারে। এসময় সুষম খাদ্য শুধু মায়ের সুস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের সহায়তা করে না বরং শিশুকে দুধ খাওনোর সঠিক পুষ্টিও সরবরাহ করে। তাই এসময় মায়ের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মায়ের খাদ্য উপাদানই শিশুর একমাত্র খাদ্যের উৎস ।তাই মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য সঠিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

দুধ ও পনির: অনেকেরই ধারণা সিজারের পর দুধ খাওয়া যাবে না ।কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শে এরকম কোন প্রকার বিশেষত্ব পাওয়া যায় না। এসময়ে প্রচুর সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। তাই নিঃসন্দেহে দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার পুষ্টিকর। কিন্তু, যদি কেউ দুধ সরাসরি খেতে না পারে তাহলে দুধের তৈরি খাবার যেমন পায়েস, সেমাই, ছানা, সন্দেশ ইত্যাদি খেতে পারে। যেগুলো মা এবং নবজাতক শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

ভিটামিন: সিজারিয়ান ডেলিভারির পর শরীরকে পুনরুদ্ধার করতে ভিটামিন এ’ সি’ এবং ক্যালসিয়াম অবশ্যই খেতে হবে। এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য সবুজ শাকসবজি, কমলা, তরমুজ ,আঙ্গুর ইত্যাদি।

প্রোটিন ও আয়রন: শরীরের শক্তি বৃদ্ধি এবং শিশুকে দুধ পান করানোর জন্য এবং পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনের জন্য প্রোটিন ও আয়রন খাদ্য গ্রহণ করা খুবই জরুরি।প্রোটিন ও আয়রন এর মধ্যে রয়েছে মাংস, ডিম, মসুর ডাল, গমের রুটি ,ব্রাউন ব্রেড ও ব্রাউন রাইস ইত্যাদি। যেহেতু একজন সিজারিয়ান মা তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর ফলে মায়ের শরীরে শক্তির বড় একটি অংশ চলে যায় তাই মায়ের খাদ্য তালিকায় শরীরের ঘাটতি পূরণ এবং শক্তি যোগানের জন্য প্রোটিন ও আয়রন অবশ্যই রাখতে হবে ।

পানি ও অন্যান্য: শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৭ গ্লাস পানি পান করা উচিত ।একজন সিজারিয়ান মায়ের রক্তক্ষরণের ফলে শরীরে পানিশূন্যতা প্রভাব লক্ষ্য করা যায় ।তাই এ সময় পানি পান করার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া আদা চা খেলে শরীরের ঠান্ডার প্রভাব কমে আসবে। এছাড়াও সিজার পরবর্তী সময়ে মেথির ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ ।

সিজারের পরবর্তী সময়টি অনেক সময় কঠিন হতে পারে। তাই এই সময়ে শরীরের নিতে হবে বিশেষ যত্ন। যাতে সিজারিয়ান মা শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারে । আর শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য দরকার একটি স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা । এই খাদ্য তালিকা অনুসরণ করলে আশা করা যায় একজন সিজারিয়ান খুব দ্রুতই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে।

তথ্যসূত্রঃ 

https://www.carehospitals.com/blog-detail/food-to-eat-and-avoid-after-cesarean/

Check Also

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়?

আপনি কি জানেন? ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়? মানবদেহে ডায়াবেটিস ৪০ mg/dl এর নিচে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *