ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা যা মারাত্মক ক্ষতিকর

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা এই কথাটি বলতে গেলেই আমার মনে পড়ে যায় অভির কথা। অভি আমার ছোটবেলার বন্ধু একসাথেই আমাদের বেড়ে ওঠা। গতবছর অভির পরিবারের সবাই আমেরিকাতে ওর ফুপির (মিসেস রুমানা) বাসায় বেড়াতে যায়। যেহেতু ওরা এতদিন পর বেড়াতে এসেছে তাই সবাই ভেবেছিল খাবারের মেন্যু হবে অনেক স্পেশাল। ফুপির হাতের রান্নাও ছিল অসাধারন। তাই সবাই  ভীষণ আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছিল খাবারের মেন্যু কি হবে সেটা দেখার জন্য। সবাইকে অবাক করে দিয়ে অভির ফুপি যেসব খাবার পরিবেশন করেছিল টা জানলে রীতিমত অবাক হবেন। খাবারের টেবিলে ছিল পালংশাক, পাঁচ পদের ভর্তা, সবজী ভাজি, ছোট মাছ চচ্চরী, ডাল, বিভিন্ন ফল যেমন আপেল, পেঁপে, স্ট্রবেরী ইত্যাদি। তখন সবাই অভির ফুপিকে জিজ্ঞেস করল আমেরিকায় বসে এতো দেশীয় আয়োজন? ব্যাপারটা খুবই আশ্চর্যের!

পালং শাক
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

অভির ফুপি তখন বলল, দাওয়াত বলতেই আমরা মনে করে থাকি প্রচুর খাওয়া দাওয়া হবে, পোলাও, রেজালাসহ ভারী আইটেমগুলোই খাবার মেন্যু হিসেবে থাকবে। নিজেদের শরীরের দিকে খেয়াল করিনা। কিন্তু তোমরা জানো? ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন গবেষনা করে জানিয়েছে বিশ্বে প্রতি ১০ জনে একজন করে এখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এর অন্যতম কারন হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন। আর সঠিক পুষ্টিসম্মত খাবার আমরা কেউ গ্রহন করছি না। বিধায় এটি এখন ব্যাপক আকার ধারন করেছে। আমাদের এশিয়াতেও এর প্রকোপ ভয়াবহ ভাবে বেড়েই চলেছে। এদিকে অভির বাবা-মা দুজনেরই ডায়াবেটিস। তাই অভির ফুপি মিসেস রুমানা সকলের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করতেই এই আয়োজন করেছে। এমনকি অভিকেও কঠোরভাবে বলে দিয়েছে এখন থেকেই সঠিক খাবার তালিকা নির্বাচন করে খেতে। চলুন জেনে নেয়া যাক ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা হিসেবে যে খাবারগুলো থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।

মিষ্টিজাতীয় খাবার

মিষ্টিজাতীয় খাবারঃ

মিষ্টি নামটাই আসলে লোভনীয় যা সামনে থাকলে না থেয়ে থাকা খুবই মুশকিল। কিন্তু ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য এটি এক ধরনের বিষ। কারন বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে দেখেছেন, অতিমাত্রায় চিনি জাতীয় কিছু যেমন, জুস, মিষ্টি, জ্যাম, দই, মধু, কর্ণ সিরাপ, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিঙ্কস, পেস্ট্রি, কেকসহ আরো বেশ কিছু ধরনের খাবার খেলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। লুজান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুক টাপি বলেছেন, সুগার হলো ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রধান ক্যালরিযুক্ত খাবারের উৎস। এই চিনিজাতীয় খাবারগুলোই শরীরে ক্যালোরির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর তাই সকলের উচিত এই খাবারগুলোকে পরিত্যাগ করা।

আরো পড়ুন>>>

হার্টের ব্লক দূর করার ব্যায়াম

এজমা থেকে মুক্তির উপায়

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়

কার্বোহাইড্রেট খাবারঃ
কার্বোহাইড্রেট খাবার

কার্বোহাইড্রেট খাবারঃ 

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কার্বোহাইড্রেট কিংবা শর্করা এই জাতীয় সব খাবার নিষেধ নয়। কিন্তু খেলেও শরীরের সুগার লেভেল কত আছে তার উপর নির্ভর করে খাওয়া উচিত। বিশেষ করে মাটির নিচে উৎপন্ন খাবার যেমন, আলু, গাজর প্রভৃতি কম খাওয়া উচিত। এছাড়াও ডাক্তাররা ভাত কম খেতে বলেন। তাহলে শরীরে ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা থাকে। কারন ওজন বৃদ্ধি পাওয়া একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বিপদজনক।

চর্বিযুক্ত/ তেলজাতীয় খাবার

চর্বিযুক্ত/ তেলজাতীয় খাবারঃ 

চর্বিযুক্ত খাবার বলতে গরুর মাংস, হাসের মাংস, ডিমের কুসুম, ফার্মের মুরগী, মাখন, ঘি, পূর্ণ ননিযুক্ত দুধ, মুরগির চামড়া ইত্যাদি। আর তেলজাতীয় খাবার হলো ভাজাপোড়া যেমন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চাইনিজ খাবার, পাকোড়া ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেন, যেকোন ধরনের চর্বিযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মূল কারন হলো চর্বিযুক্ত খাবারগুলো রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত খেতে থাকলে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলে হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে যে কোনো সময় হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোক হবার ঝুঁকি থাকে যার কারনে আকস্মিক মৃত্যু হতে পারে। তাই চর্বি ও তেল সহ খাবার খেলেও পরিমিত আকারে খাওয়াটাই শ্রেয়।

লবন

লবনঃ 

অতিরিক্ত কোনকিছুই ভালো নয়। সেটা যদি হয় লবন তাহলে তো কোন কথাই নেই। সাধারনত ডাক্তাররা সবাইকেই সুস্থ থাকতে কাঁচা লবন খেতে নিষেধ করেন। তাহলে আপনারাই বুঝুন যে অতি মাত্রায় কাঁচা লবন খেলে ডায়াবেটিস রোগীর কি অবস্থা হতে পারে। বেশি লবন খাওয়ার ফলে শরীরে সুগার লেভেল বা উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়। এমনকি আরো অনেক ধরনের রোগ-ব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে। তাই এক্ষুনি লবন খাওয়া বাদ দিন।

অ্যালকোহল

অ্যালকোহলঃ 

অ্যালকোহল বলতে সাধারনত আমরা মদ, বিয়ার ইত্যাদিকে বুঝি। যেগুলো পান করলে শরীরে রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ে এবং রক্তচাপ হবার সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এমনকি যে রক্তনালীর মাধ্যমে আমাদের মস্তিস্কে রক্ত সরবরাহ হয়, সেখানে ক্ষতি হতে পারে। যার ফলে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য আরেকটি বিষাক্ত খাবার হলো অ্যালকোহল। চিকিৎসকরা এটি খেতে একেবারেই নিষেধ করে দিয়েছেন। আর বিশেষ করে যারা নিয়মিত ইনসুলিন ব্যবহার করে থাকেন তাদেরকে এর ধারে কাছে যেতেও বারন করেছেন। অতঃপর বোঝাই যাচ্ছে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অ্যালকোহল মারাত্মক হানিকর খাবার।

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

সুতরাং, দেরী না করে এখনই ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা বুঝে এগুলো থেকে দূরে থাকুন। নিজেও স্বাস্থ্য সচেতন হোন, এবং আপনার বাসায় কারোর ডায়াবেটিস থাকলে তাকেও  সাবধান করুন। ডায়াবেটিস হলে ঘাবড়ে না গিয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে আপনি সবসময় ভালো থাকতে পারবেন। তাই আজকেই নিজের জন্য সঠিক খাদ্য তালিকা বেছে নিন আর বাদ দিন ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা।

বিঃ দ্রঃ আমাদের লিখার মূল উদ্দেশ্যই হলো আপনাদের কিছুটা হলেও পাশে থেকে সাহায্য করা। এই লিখাটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তবেই আমাদের সফলতা। আরো কি ধরনের বিষয় সম্পর্কে আপনারা জানতে চান এবং আমাদের কোন ভুল-ত্রুটি হলে অবশ্যই  মন্তব্য করে জানান। আমরা চেষ্টা করব আপনাদের পরামর্শ অনুযায়ী এগিয়ে যেতে। সবার সুস্থতা কামনা করছি।

তথ্যসূত্রঃ 

https://www.webmd.com/diabetes/diabetic-food-list-best-worst-foods

https://www.everydayhealth.com/type-2-diabetes/diet/joy-bauer-foods-to-avoid-when-you-have-diabetes/

Check Also

শারীরিক-ব্যায়ামের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা.

শারীরিক ব্যায়ামের উপকারিতা ও অপকারিতা

ব্যায়াম হলো শারীরিক কার্যকলাপ  যা ফিটনেস এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে বজায় রাখে।  আপনি যদি আপনার শরীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *