ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ

বাংলাদেশে বর্তমানে ডেঙ্গু এমন একটি মারাত্মক সমস্যা, যা এখন ভয়ংকর রুপ ধারন করেছে। অতীতেও ডেঙ্গু হয়েছে কিন্তু এই ২০২৩ সালের মত ভয়ংকর অবস্থা আমরা কখনোই দেখিনি। ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মূলত মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং বেশিরভাগ সময় জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে দেখা যায়। এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলো উচ্চ জ্বর, শরীরে ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, চোখের পেছনে ব্যাথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি।  ডেঙ্গু জ্বরের তাপমাত্রা সাধারনত ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি এসময়ে ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসে যার কারনে বোঝার উপায় থাকেনা এটা ডেঙ্গু নাকি স্বাভাবিক জ্বর।

আমরা ইতিমধ্যে সকলেই জানি, স্ত্রী এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি বাড়ে। আর এই মশার দ্বারাই আস্তে আস্তে ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে থাকে। যখনই কেউ জানতে পারে তার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে ঠিক তখন সে কি করবে বা কি করা উচিত বুঝতে পারেনা। অচিরেই ঘাবড়ে যায়। কিন্তু, এসময়ে চিন্তিত না হয়ে জানতে হবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকার কিভাবে করে।

আসুন তাহলে জেনে নেই ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কেঃ

জ্বর এর তাপমাত্রা খেয়াল করা উচিত

জ্বর এর তাপমাত্রা খেয়াল করা উচিতঃ ডেঙ্গু জ্বর মূলত দুই রকম হয় ক্লাসিক্যাল এবং হেমোরেজিক জ্বর।  ক্লাসিক্যাল হলো স্বাভাবিক জ্বরের মতই। আর হেমোরেজিক হলো ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর। প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু রোগীর দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে,  যে জ্বর কি স্বাভাবিক এর মত নাকি এর থেকেও গুরুতর। স্বাভাবিক হলে বাসায় থেকেই রোগীর যত্ন নিতে হবে। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা কবে করবে

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা কবে করবেঃ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলে থাকেন যে, জ্বর আসার প্রথমেই ডেঙ্গু টেস্ট না করে ২/৩ দিন পর করতে। সেক্ষেত্রে রিপোর্ট স্পষ্টভাবে আসবে।

ঔষধ দেয়া যাবে কি

ঔষধ দেয়া যাবে কিঃ ডেঙ্গু রোগের জন্য বিশেষভাবে কোন ঔষধ আবিস্কার হয়নি। তাই ডাক্তারগন বলে থাকেন যে, এসময়ে রোগী প্যারাসিটামল খেতে পারবে কিন্তু কোন অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহন করতে পারবেনা।

আরো পড়ুন>> ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার 
                           ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে
                           ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা

পর্যাপ্ত পানি ও স্যালাইন গ্রহন

পর্যাপ্ত পানি ও স্যালাইন গ্রহনঃ শরীরে কোন ভাবেই যেন পানির ঘাটতি না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর তাই প্রচুর পরিমানে পানি, স্যালাইন পান করতে হবে।

পুষ্টিসম্মত খাবার খাওয়া

পুষ্টিসম্মত খাবার খাওয়াঃ ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং যেসকল খাবার রক্তে প্লাটিলেট বাড়ায় সেগুলো বেশি করে খেতে হবে। যেমনঃ পালং শাক, বিট্রুট, ডালিম, পেঁপে ও পেঁপে পাতার রস, ডাবের পানি, দুধ, পেয়ারা, ফলের জুস ইত্যাদি।

পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা

পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাঃ ডেঙ্গু রোগীর চারপাশ অবশ্যই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যাতে করে আর কোনভাবেই এডিস মশার দ্বারা সংক্রমন না হয়। কোথাও ময়লা কিংবা পানি জমতে দেয়া যাবে না। অন্যথায় মশার সংক্রমন বাড়বে।

ডেঙ্গু রোগীর সেবা

ডেঙ্গু রোগীর সেবাঃ সার্বক্ষণিক ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির সেবাযত্ন নিতে হবে। বাসায় সম্ভব না হলে নিকটস্থ কোন হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সর্বদা পরিস্কার পোষাক পরিধান করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের মূলত তিনটি ধরন বা প্রকার রয়েছে জেমনঃ “এ”, “বি” এবং “সি” ক্যাটাগরি। এর মধ্যে “এ” ক্যাটাগরির জ্বর আসলে তেমন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এই ক্যাটাগরির রোগীকে  তাই তাদের বাসাতেই পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং তরল জাতীয় পানীয় পান করানো যেতে পারে।

“বি” ক্যাটাগরির জ্বর হলে  যারা ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার সমস্যায় ভুগছেন অথবা অন্তঃসত্ত্বা বা পেটে ব্যথা বা বমি করছেন এমন যে কোন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেরি না করে দ্রুত  হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।

“সি” ক্যাটাগরির জ্বর  হল সবচাইতে বেশি ঝুকিপূর্ণ। তাই এই ধরনের জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: ডেঙ্গু মশা থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যেমন মশার নেট, মশার ম্যাট, কয়েল, স্প্রে, ইত্যাদি।শিশুদের  শরীর  ঢেকে রাখে এমন  বড় হাতাওয়ালা কাপড় পরিধান করান।

মূল কথা, একজন ডেঙ্গু রোগীর অবস্থা যেকোন সময় অবনতি হতে পারে তাই ডেঙ্গু রোগের নমুনা দেখা যাওয়া মাত্রই একজন দক্ষ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা জ্রুরী। তাই আসুন সবাই ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন হই।

তথ্যসূত্রঃ

https://www.cdc.gov/dengue/symptoms/family.html

https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/dengue-and-severe-dengue

Check Also

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়?

আপনি কি জানেন? ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়? মানবদেহে ডায়াবেটিস ৪০ mg/dl এর নিচে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *