হার্ট এ ব্লক হওয়া যেন এখন সাধারন একটি ব্যাপার। হ্যাঁ, প্রতিদিনই যেকোন বয়সের কেউ না কেউ হার্টের রোগের শিকার হচ্ছে। কি অবাক হচ্ছেন?
বয়স হলেই যে হার্টে সমস্যা হবে এখন আর এমনটা নয়। আমাদের আশেপাশের অনেক মানুষ প্রতিনিয়ত হার্টে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুক্তভোগী। এর মধ্যে হার্টে ব্লক সৃষ্টি হওয়া অন্যতম। এর প্রধান কারন হলো অনিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন কিংবা বংশগত কারন। আর তাই হার্টের ব্লক দূর করার ব্যায়াম করলে ব্লক হওয়ার আশংকা অনেকটা কমবে। এমনকি নিয়মিত এই ব্যায়াম করার ফলে শুধু হার্টের ব্লক নয়, হার্টজনিত সকল সমস্যাই রোধ করা সম্ভব হবে।
আমার প্রতিবেশী রমিজ চাচা বয়স ৬৬, উনি বছরখানেক আগে একটা সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি অবসরে যান। অনেকদিন টানা বাসায় থাকার ফলে চাচার শারীরিক কোন শ্রম হয়না, কিছুদিন আগেই চাচার হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। উনার হার্টে রিং পরানো হয়েছে। এখন ডাক্তারের পরামর্শে রমিজ চাচা প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটতে বের হন এবং হালকা ব্যায়াম করেন।
আরো একজনের কথা শুনলে রীতিমত অবাক হবেন, আমার স্কুল সহপাঠী আনিস বয়স ৩৫। কয়েকদিন আগে ওর বোনের সাথে দেখা হলো। জানতে পারলাম আনিস এর হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে। ওর ইন্ডিয়াতে চিকিৎসা চলছে। আনিস এর খাদ্যাভ্যাস ঠিক ছিল না তাছাড়া ঢাকার বাইরে জবের পোষ্টিং থাকার কারনে লাইফস্টাইল অনিয়মিত ছিল।
এ ঘটনাগুলো আমাদেরই প্রিয়জন কিংবা কাছের মানুষগুলোর। আমরা কখোনোই চাইনা আমাদের নিজেদের অথবা চারপাশের কারো সাথে এমনটা হোক। এটি আমাদের কাম্য নয়। তাই সকলের হার্ট সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জ্রুরী। বিশেষ করে হার্টে ব্লক যাতে না হয় সেজন্য উচিত হার্টের ব্লক দূর করার ব্যায়াম করা।
আসুন তাহলে জেনে নেই ঠিক কি ধরনের ব্যায়াম করলে আমরা হার্টের ব্লক হওয়ার ঝুঁকি থেকে বিরত থাকতে পারবোঃ
১। অ্যারোবিকঃ অ্যারোবিক ব্যায়াম হলো সেইসব ব্যায়াম যার কিছুক্ষনের মধ্যেই শরীর ঘামতে শুরু করবে। অ্যারোবিক ব্যায়াম করলে হার্টে ব্লক হবার ঝুঁকি কমে যায়, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, শরীরের মাংসপেশি শক্তিশালী করে।
জগিং লাফঃ জগিং লাফে প্রচুর ক্যালরি বার্ন হয়। নিয়মিত করলে হার্ট ভালো থাকে।
আরো পড়ুনঃ
ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়?
সাঁতার কাটাঃ সাঁতার কাটলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে। শরীরের চর্বি কমায়, স্ট্রেস দূর করে। আরো নানাবিধ উপকার রয়েছে। এটি একটি সামগ্রিক ব্যায়াম যা শরীরের বিভিন্ন অংশে কাজ করে, যেমন হাত, পা, স্পাইন, কোয়াড্রিসেপ্স, ট্রাইসেপ্স, পেক্টরালিস ইত্যাদি। এটি শরীরের সামগ্রিক ফিটনেস এবং মাস্কুলার ব্যায়ামে সাহায্য করে এবং শরীরের সমস্যা এবং অস্থি-মাংসপেশী স্থিতি উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি ব্লাড প্রেশার, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
সাইকেলিংঃ সাইকেলিং হার্টের ব্লক দূর করতে একটি কার্যকরী ব্যায়াম। এটি এমন একটি শারীরিক ব্যায়াম যা আপনার হার্টের কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। ব্লকের গঠন এবং পরিস্থিতি ঠিক রাখতে অসাধারন ভূমিকা পালন করে।
খেলাধুলাঃ নিয়মিত খেলাধুলা করলে শরীর ও মন দুটোই ফিট থাকে। হার্টে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সুন্দর এবং স্বাভাবিক থাকে। যেমনঃ বাস্কেটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি আরো অনেক।
নাচঃ নাচকেও এক ধরনের অ্যারোবিক ব্যায়াম বলা হয়। কেননা, নাচলে রক্ত সঠিকভাবে পাম্প করে।
দড়িলাফঃ বারবার দড়ি লাফে বিপুল পরিমানে ক্যালরি বার্ন হয়। তাই এটি হার্টকে সুস্থ রাখতে অনেক উপকারী।
২।শক্তি ব্যায়ামঃ এটি মূলত চেষ্ট প্রেস ব্যায়াম অথবা শক্তি বহন করার ব্যায়াম। যেমন ওজন বহন করা, ডাম্বেল এর মাধ্যমে ব্যায়াম। পুশ- আপ করা, চিন আপ করা, এসব রেমিটেন্স ব্যায়াম এর অন্ত্রভুক্ত। যাদের শরীরে স্বাভাবিকের থেকে চর্বি অনেক বেশি, ওজন বেশি, কোলেস্টেরল বেশি তাদের হার্টে ব্লক হবার সম্ভাবনাও অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের জন্য এই বায়বীয় ব্যায়াম গুলো অনেক কার্যকরী। বিশেষ গবেষনায় দেখা গিয়েছে বায়বীয় ব্যায়াম এইচ ডি এল (HDL) বাড়ায় আর এল ডি এল(LDL) কমায়। HDL হলো ভালো কোলেস্টেরল আর LDL হলো খারাপ কোলেস্টেরল। তাই বোঝাই যাচ্ছে বায়বীয় ব্যায়াম হার্টের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩। ইন্টারভ্যাল ফিটনেস (HIIT) ঃ HIIT কার্ডিওভাসকুলার হার্ট এর স্বাস্থ্য সহ শরীরকে ফিট রাখতে পারদর্শী। এ ধরনের ব্যায়ামগুলো কম সময় যেমন ৩০ সেকেন্ড, ১ মিনিট এভাবে ধীরে ধীরে ব্যায়ামের সময় বর্ধিত করবে। এতে করে আর শরীর এর উপর প্রথমেই চাপ পড়ে না। এটি একটি উন্নত কৌশল যার মাধ্যমে শুরুতে অল্প সময় এবং পরবর্তীতে এক নাগাড়ে অনেক সময় পর্যন্ত ব্যায়াম করার অনুশীলন রপ্ত করা যায়।
৪। যোগব্যায়ামঃ
শুধুমাত্র শারীরিক ব্যায়াম করলেই হার্ট ঠিক থাকবে এমনটা নয় তার পাশাপাশি মানষিক স্বাস্থ্যও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ কারনেই যোগব্যায়ামের (মেডিটেশন/ইয়োগা) মাধ্যমে হার্ট সচল রাখতে সহায়তা করে। যার ফলে হার্টে ব্লক হবার সুযোগ করে যায়। যোগব্যায়াম মানষিক চাপ কমায়, মন ভালো রাখে। মনের স্বাস্থ্য যদি ভালো থাকে তাহলে শরীরও ভালো থাকে। প্রতিদিন ঘরে, বাসায় ছাদের, বাগানে কিংবা পার্কে নীরব কোন স্থানে যোগব্যায়াম করলে অচিরেই মেজাজ ফুরফুরে থাকবে। তাই এটি আমাদের রুটিনে পরিনত করা উচিত।
তবে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, যে কোনো ধরণের ব্যায়াম শুরু করার আগে, আপনাকে আপনার বর্তমান স্বাস্থ্য অবস্থা, এবং ব্যায়াম করার সঠিক উপায় জানতে হবে। এছাড়াও, যে কোনো ব্যায়াম করার সময়কাল, সময়সূচী, এবং কি কি ব্যায়াম করলে হার্টে ব্লক রোধ করা যায় সেটা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করাই গুরুত্বপূর্ণ। কারন সকলের বয়স অনুযায়ী ব্যায়াম করার ক্ষমতা এক হবেনা।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যায়াম সত্যিই আমাদের জীবনকে নতুন করে সাজিয়ে দিতে পারে। তাই, ছোট- বড় সবাইকেই নিয়ম করে ব্যায়াম করা উচিত তাহলে হার্টের ব্লক থেকে আমরা সকলেই বেঁচে যাব। শুধু তাই নয়, দৈনন্দিন ব্যায়াম করলে ডায়বেটিস সহ আরো অনেক রোগ-ব্যাধি থেকে আমরা নিরাপদ থাকবো।
আসুন আমরা নিজেদের হার্ট সম্পর্কে সচেতন হই এবং অন্যকেও সচেতন করি। আমাদের ব্লগটি কেমন লাগলো মন্তব্য করে অবশ্যই জানাতে ভুবেন না। আর কি কি বিষয় নিয়ে আপনারা জানতে আগ্রহী মন্তব্য ক্রুন।
তথ্যসূত্রঃ
https://www.webmd.com/heart-disease/heart-disease-prevention-exercise