এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা কি

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি
এফিলিয়েট মার্কেটিং কি

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি? এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো এমন একটি বিজ্ঞাপন প্রক্রিয়া যেখানে সাধারণত বিভিন্ন পরিচিত মুখ ফেসবুক, ইউটিউব, ব্লগ ইত্যাদি বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে এফিলিয়েট লিংকের সাহায্যে গ্রাহকদের কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা কিনতে উৎসাহিত করেন এবং তার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করেন।আজকের এই আর্টিকেলে আমরা  এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো তা নিয়ে কথা বলব।

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে মার্কেটিং এর অন্যান্য ধরনকে গুলিয়ে ফেলার তেমন সুযোগ নেই। কারণ এফিলিয়েট মার্কেটিং এর রয়েছে দুইটি মৌলিক বিষয়।

  •  আলাদা বিজ্ঞাপনদাতা
  • এফিলিয়েট লিংক বা প্রমো কোড

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করব

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করব

এফিলিয়েট মার্কেটিং কাজ করার ক্ষেত্রে উপরে উল্লিখিত মৌলিক বিষয় দুটিই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে তার পুরো প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো।

ধাপ ১ঃ প্রতিষ্ঠানের বাইরের কোনো বিজ্ঞাপনদাতা বা প্রচারক ঐ প্রতিষ্ঠানের পণ্য যেকোনো মাধ্যমে প্রচার করবেন। সেই মাধ্যম হতে পারে ব্লগ, আলাদা ওয়েবসাইট, সামাজিক গণ্যমাধ্যম কিংবা পডকাস্ট। এক্ষেত্রে প্রচারককে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের বাইরের কেউ অর্থাৎ তৃতীয় পক্ষ হতে হবে। এই ধরনের এফিলিয়েট মার্কেটিং করার সময় প্রত্যেক মার্কেটারের জন্য আলাদা একটি লিংক থাকে যা গ্রাহকেরা ঐ মার্কেটারের কন্টেন্টে পাবে।

ধাপ ২ঃ প্রচারণায় আগ্রহী হলে গ্রাহকেরা ঐ লিংক ক্লিক করবে। ফলে সে চলে যাবে ঐ নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা বিক্রয় করার সাইটে।

ধাপ ৩ঃ পণ্যটি পছন্দ হলে গ্রাহক সেটি ক্রয় করবে।

ধাপ ৪ঃ পণ্যটি কেনার সাথে সাথে ট্র্যাকিং লিংকটির সাহায্যে গ্রাহকের এই কার্য্রক্রম ট্র্যাক বা রেকর্ড হবে। পণ্য বিক্রয়ের বিস্তারিতে যা যুক্ত হয়ে যাবে।

ধাপ ৫ঃ পণ্যটি কেনার পরে গ্রাহককে ঐ ওয়েবসাইটের হোম পেজে পাঠানো হবে বা অন্যান্য পণ্য দেখানো হবে। আর একই সাথে ঐ প্রচারকের কোটায় একটি বিক্রয় যুক্ত হবে।

ধাপ ৬ঃ গ্রাহকের পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে প্রচারক টাকা পাবেন। এক্ষেত্রে যত বেশি গ্রাহক পণ্য বা সেবা কিনবেন প্রচারকের একাউন্টে তত টাকা জমা পড়বে।

উল্লেখ্য যে, অনেক সময় এফিলিয়েট মার্কেটাররা এফিলিয়েট লিংকের বদলে প্রমোশোন কোড বা ডিসকাউন্ট কোডও ব্যবহার করে থাকেন। ক্রয়ের সময় এ ধরনের কোড প্রবেশ করালে কিছুটা মূল্যছাড় বা অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যায়। ফলে গ্রাহকেরা হয়তো পণ্য ক্রয়ের সময় সেই প্রমো কোড ব্যবহার করে। এতে করে যেই এফিলিয়েট মার্কেটারের প্রমো কোড ব্যবহার করা হচ্ছে তার নামেও কিছু টাকা জমা হচ্ছে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং বাংলাদেশ

এফিলিয়েট মার্কেটিং বাংলাদেশ

অনলাইনে টাকা আয়ের সবচেয়ে বড় যে উপায়, সেটিই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, শুধু অ্যাফিলিয়েট মাকের্টিংয়ের মাধ্যমে মার্কেটাররা আয় করছেন ৪০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল এই বাজারের ১ শতাংশও যদি আমরা ধরতে পারি তাহলে প্রতি বছর দেশে আসবে ৪০০ কোটি টাকা। এই জায়গাটিতে পৌঁছনো খুব একটি কঠিন বলে মনে করেরনা বাংলাদেশের ব্লগার ও এফিলিয়েট মার্কেটার নাসির উদ্দিন শামীম।

আবার ব্লগ লিখে অ্যাফিলিয়েট মাকের্টিংয়ের ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্সসহ বিভিন্ন অ্যাড নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও নিজের সাইট থেকে আয় করা যায়। এখান থেকেই আমাদের তরুণদের কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে এখন অনেক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার, গুগল অ্যাডসেন্স পাবলিশার রয়েছেন যারা ব্লগ লিখে আয় করছেন ৩ থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত। বাংলাদেশি তরুণরাই যে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছেন তা আমি নিজেও জানতাম না এতদিন।

সম্প্রতি ব্যাংকে আমার চেক জমা দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অফিসারের মুখেই শুনেছি একজন তরুণের গল্প, যে কিনা প্রতিমাসেই ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলারের গুগল অ্যাডসেন্স চেক জমা দেয়।দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে অন্যরাও এখন বিশাল এই বাজারে প্রবেশ করতে পারেন। আমাদের মধ্যে এখন সচেতনতা দরকার এবং সেইসঙ্গে উদ্যোগ।

এফিলিয়েট মার্কেটিং সাইট

এফিলিয়েট মার্কেটিং সাইট

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর অনেক বড় বড় সাইট বা নেটওয়ার্ক রয়েছে যাদের কাছ থেকে সাইনআপ করে আপনি বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট সেল করতে পারেন। বিশ্বের বড় কয়েকটি অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক হচ্ছে;

আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে জড়িত এমন অধিকাংশ লোকই সম্ভবত আমাজন এফিলিয়েট  প্রোগ্রামের নাম শুনেছেন। বিশ্বজুড়ে এফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এই আমাজন এফিলিয়েট প্রোগ্রাম। এটি এতই বড় যে সারা বিশ্বের এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ৪৫% ভাগই হয় এই আমাজনকে ঘিরে।

মূলত আমাজন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস । এখানে নেই এমন কোনো পণ্য নেই। আর আপনি এই পণ্য গুলো রিভিউ করে অথবা এ সম্পর্কে নানা তথ্য দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারেন। তারা যদি আপনার লিংকের মাধ্যমে পণ্যটি কিনে থাকে তাহলে আপনি পাবেন কমিশন। পণ্য ভেদে যা হতে পারে ১ থেকে ২০%। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে আমেরিকাতে গড়ে প্রতি বছর একজন আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটার ৫৫ হাজারের ডলারেরও বেশি আয় করে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে যা হতে পারে বছরে ১ লক্ষ ২০ হাজার ডলারের বেশি। আবার সর্বনিম্ন হতে পারে বছরে ১৬ হাজার ডলারের কাছাকাছি।

ড্রপ শিপিং সম্পর্কে জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

 এফিলিয়েট মার্কেটিং কেনো করবো

 এফিলিয়েট মার্কেটিং কেনো করবো

ডিজিটাল মার্কেটিং এর শত শাখা-প্রশাখার মধ্যে কেন এফিলিয়েট মার্কেটিংকে গুরুত্ব দেবেন বা আদৌ করবেন কি না সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ঠিক তাই এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা গুলোকে কেন্দ্র করে কেন করবেন এফিলিয়েট মার্কেটিং এমন প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গি

প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গি

একজন মার্কেটার কেন এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে জড়িত হবে সেই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ, উপার্জন। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান ঠিক কেন অন্যান্য মার্কেটিং মাধ্যম থাকতে এফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবহার করবে তা জানাটাও কিন্তু জরুরি।

পণ্য বিক্রয়

পণ্য বিক্রয়

পুরো লেখাটা পড়ে নিশ্চয়ই বিষয়টি পরিষ্কার যে প্রতিষ্ঠান গুলো পণ্য বিক্রয়ের জন্যই এফিলিয়েট মার্কেটিং করিয়ে থাকে। মূলত মার্কেটিং ও এডভার্টাইজিং এর বাজেটটা এফিলিয়েট মার্কেটিং এ খরচ করলে বেশ ভাল ফলাফলই পাওয়া যায়।

পরিচিতি বৃদ্ধি

পরিচিতি বৃদ্ধি

পরিচিতি বৃদ্ধি যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাকে  বলা যায় মার্কেটিং এর একদম সাধারণ ধারণা। আর তাই ওয়েবসাইটে অধিক ট্রাফিক আনাটাও এফিলিয়েট মার্কেটিং এর একটি লক্ষ্য। কারণ এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাহায্যে কম খরচেই অনেক অনেক ভিজিটর আনা যায়। এর ফলে গ্রাহকদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। তার পাশাপাশি এখানে পণ্য বিক্রয়েরও একটি সুযোগ থেকেই যায়।

 গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা

 গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা

খুব সুপরিচিত মুখের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইতিবাচক কথা শুনলে অনেক গ্রাহকের মনেই ঐ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে রাতারাতি একটি বিশ্বাস তৈরি হয়। পরিসংখ্যান বলে, ৯৫ ভাগের উপরে মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করার আগে পণ্যটি সম্পর্কে রিভিউ পড়ে, খোজ খবর নেয়। তখন যদি সাইটটির একটি ভাল গ্রহণযোগ্যতা থাকে তাহলে তা পণ্য বা সেবা বিক্রিতে অনেকটাই সহায়তা করে।

 গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ

 গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ

গ্রাহকের তথ্য বর্তমান ডিজিটাল জগতের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসগুলোর একটা। কারণ গ্রাহক সম্পর্কে যতটা তথ্য জানা যাবে, ততটাই নিশ্চিত হওয়া যাবে তার চাহিদা সম্পর্কে। আর তার চাহিদা মতো পণ্য আনতে পারলেই বাড়বে বিক্রি। মূলত এই প্রক্রিয়াটি একটি গণ প্রক্রিয়া। এতে করে অসংখ্য গ্রাহকের তথ্য একবারে সংগ্রহ করা হয়। এমনকি কোনো গ্রাহক যতক্ষণ একটি ওয়েবসাইটে অবস্থান করবে ততক্ষণই তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ হতে থাকবে।

এছাড়াও গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধির উপায় সৃষ্টিতেও ব্যবহার করা যায় এফিলিয়েট মার্কেটিং। গ্রাহককে ব্যবসার অফার, আপডেট জানানোর জন্য সেরা মাধ্যম হলো ইমেইল মার্কেটিং। আর ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য প্রয়োজনীয় ইমেইল সংগ্রহের একটি প্রকৃষ্ট মাধ্যম হলো এফিলিয়েট মার্কেটিং। শুধু ইমেইল নয়, ফোন নম্বর, ফেসবুক আইডি থেকে শুরু করে আরো নানা তথ্য যোগাড় করতে এফিলিয়েট মার্কেটিং রাখতে পারে দারুণ ভূমিকা।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কোর্স

এফিলিয়েট মার্কেটিং কোর্স

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে ইন্টারনেট মার্কেটিং এর অনেক কিছু জানতে হবে এবং প্রচুর পড়াশোনা করা দরকার। ইন্টারনেটে সার্চ করে বিভিন্ন রাইটারের লেখা পড়ে, তাদের পিডিএফ বই পড়ে বা ভিডিও দেখেও আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে পারেন।

তবে ইন্টারনেট থেকে শিখতে প্রচুর সময় নষ্ট হতে পারে সরাসরি গাইডলাইনের অভাবে। কারন আপনি ভাল রিসোর্স কোথায় আছে জানেন না এবং ইন্টারনেটে সার্চ করে সবকিছু পাওয়া অনেক দূরুহ ব্যাপার। হাতে কলমে শেখার জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রফেশনালি কেউ করছে তার কাছ থেকে বা ভালমানের কোন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটেরও দারস্থ হতে পারেন, যাঁরা দ্রুত আপনাকে একজন সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হতে সাহায্য করবে।

আপনারা খুব সহজেই Ahrefs, Shopify, bigcommerce এর মতো ওয়েবসাইট থেকে এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বেসিক ধারনা পেয়ে যাবেন।

Leave a Comment