হাই প্রেসার এর লক্ষণ ও প্রতিকার

হাই প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ মানবদেহের জন্য একটি মারাত্মক ব্যাধি। যে সকল ব্যক্তিদের হাই প্রেসার রয়েছে তাদের জীবন অনেক কঠিন হয়ে যায়। কারণ তারা যদি একটি নিয়মের মধ্যে না থাকে তাহলে তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে এবং এই হাই প্রেসার হতে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। তাই আমরা আপনাদের জন্য হাই প্রেসার এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে এসেছি। 

বিশেষজ্ঞদের মতে পৃথিবীর সর্বাধিক হাই প্রেসার অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই প্রতিটি মানুষের এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা কিভাবে বুঝব যে আমাদের হাই প্রেসার হয়েছে?যাতে করে আপনারা বুঝে নিতে পারেন আপনার শারীরিক অবস্থা দেখে আপনার মধ্যে হাই প্রেসার এর লক্ষণ গুলো রয়েছে কিনা। 

তবে অবশ্যই এই লক্ষণগুলো যদি আমাদের মধ্যে উপলব্ধি করতে পারি তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং সঠিক সেবা গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা ঠিক যে কোন মানুষের হতে পারে এবং সে সকল মানুষগুলো নিজেরাই জানেন না অজান্তে তার শরীরে দীর্ঘমেয়াদী এই রোগটি হয়েছে কিনা। তাই আজ আমরা আপনাদেরকে এরকম খুঁটিনাটি বিভিন্ন তথ্য জানাবো। চলুন তাহলে এবার আমরা আমাদের মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করি।

হাই প্রেসার এর লক্ষণ ও প্রতিকার

হাই প্রেসার এর লক্ষণ

হাই প্রেসার এর লক্ষণ আমাদের সকলের জানা অত্যন্ত জরুরি কারণ হাই প্রেসার একটি বড় ক্ষতিকর যারা মানব দেহের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে এবং সেই সমস্যা যদি মারাত্মক আকার ধারণ করে তাহলে পরবর্তীতে জীবনের ঝুঁকি থাকে। তাই অবশ্যই সকলকে উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলো জেনে রাখা উচিত।

  • অস্বাভাবিকভাবে মাথায় ব্যথা বা যন্ত্রণা হওয়া।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • বুকে ব্যথা।
  • ক্লান্তি ও অবসাদ।
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়া।
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
  • ঘাড়ে ব্যথা এবং ঘাড়ের নালী টেনে টেনে ব্যথা।
  • ঘুম কমে যাওয়া।
  • অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক না থাকা।

ব্লাড প্রেসার মাপার নিয়ম

আমাদের শারীরিক কিছু লক্ষণ দেখেই আমরা বুঝতে পারবো যে আমাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বা উচ্চরক্তচাপ হয়েছে। যখন আমরা আমাদের মধ্যে হাই প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ এর কোনো লক্ষণ বুঝতে পারব তখন অবশ্যই মনের মধ্যে থাকা আশঙ্কা দূর করার জন্য প্রথমেই আমরা ব্লাড প্রেসার মেপে জেনে নিতে পারি। কিন্তু আপনার হাই প্রেসার কত তা জানার জন্য অবশ্যই আপনাকে ব্লাড প্রেসার মাপার নিয়ম জানতে হবে। যেভাবে আপনি ব্লাড প্রেসার মাপবেন তার কিছু ধাপ আমরা আপনাদের কে জানিয়ে দিচ্ছি-

  • যে ব্যক্তি নিজের ব্লাড প্রেসার জানবেন তাকে চেয়ারের পেছনে হেলান দিয়ে বসতে হবে এবং টেবিলের ওপরে হাত রাখতে হবে। টেবিলের উপর এমন ভাবে হাত রাখতে হবে যাতে হার্টের সমতলে থাকে এবং তাকে ঢিলেঢালা জামা পরিধান করতে হবে।
  • রক্তচাপ মাপার জন্য যে কাপ ব্যবহার করা হয়, তা কুনুই হতে ২.৫ সেন্টিমিটার উপরে বাধতে হবে। একদম আলতো হাতে বাধতে হবে যাতে বেশি টাইট না হয়ে যায়।
  • কুনুই এর উপরের অংশে ধমনীর অবস্থান নির্ণয় করার পর স্টেথোস্কোপ এর ডায়াগ্রাম রাখতে হবে। ডায়াগ্রাম কাপড়ের উপরে না রাখাই ভালো। কারণ অনেক সময় শব্দ শুনতে অসুবিধা হয়।
  • হার্টের সমতল মিটার স্কেলটি রাখতে হয়।
  • যে ব্যক্তি ব্লাড প্রেসার মাপবেন তাকে একটি হাত ধমনীর ওপর ডায়াগ্রাম রেখে চেপে ধরতে হবে এবং অন্য একটি হাত দিয়ে ব্লাডার ফুলাতে হবে। চাপ দিয়ে দিয়ে যে পাম্পের সৃষ্টি করতে হবে এবং এ কাজটি যতক্ষণ না পালস বন্ধ হয় ততক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে। সেইসাথে হার্টের স্পন্দন স্টেথোস্কোপ এর মাধ্যমে কানে শোনা যায়।
  • এভাবে একবার করে ছেড়ে দিতে হবে এবং পরবর্তীতে আরো একবার করে দেখতে হবে তখন যদি মিটার স্কেলের পারদ ১২০/৮০ হয় তাহলে স্বাভাবিক ব্লাড প্রেসার রয়েছে বোঝা যায়। কিন্তু এর বেশি হলে উচ্চ রক্তচাপ এবং কম হলে নিম্ন রক্তচাপ জানা যায়।

সুতরাং আপনারা এভাবে খুব সহজে ব্লাড প্রেসার মেপে জেনে নিতে পারবেন আপনার ব্লাড প্রেসার বেশি/ কম/ স্বাভাবিক রয়েছে।এজমা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে জানতে ক্লিক করুন।

হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়/ প্রেসার হাই হলে করণীয় | দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়

হাই প্রেসার জানার পর অর্থাৎ ব্লাড প্রেসার মাপার পর যদি আপনার ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে তাহলে অবশ্যই জানতে পারবেন আপনার হাই প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ হয়েছে। ব্লাড প্রেসার মাপার পর আপনি যদি জানতে পারেন আপনার হাই প্রেসার হয়েছে তখন মানসিকভাবে ভেঙ্গে না পড়ে,  আপনাকে অবশ্যই হাই প্রেসার কমানোর উপায় কি জানতে হবে। তাই হাই প্রেসার হলে কি করা উচিত তা আপনাদের জানা প্রয়োজন। দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় গুলো হচ্ছে-

  • কোন প্রকার দুশ্চিন্তা করা যাবে না। অর্থাৎ কোন প্রকার মানসিক চাপ নেয়া যাবে না।
  • অতিরিক্ত কাঁচা লবণ খাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অর্থাৎ বয়স এবং উচ্চতা অনুসারে স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখতে হবে।
  • জাঙ্কফুড অথবা বাহিরের খাবার হতে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
  • তৈলাক্ত জাতীয় এবং অতিরিক্ত লবণ জাতীয় খাবার হতে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
  • পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।
  • একটানা অনেকক্ষণ ঘুমানো বা বসে থাকা উচিত নয়। বয়স অনুসারে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই ঘুমাতে হবে।
  • কোন প্রকার অ্যালকোহল জাতীয় খাবার অথবা ধূমপান করা যাবে না।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে।
  • শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। নিজ থেকে কোন কিছু না জেনে করাই শ্রেয়।

    আরো পড়ুনঃ

    হার্টের রোগীর খাবার তালিকা 

    ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা

    ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়?

হাই প্রেসার রোগীর খাবার তালিকা | কি খেলে প্রেসার বাড়ে

আমরা সকলেই জানি আমাদের যদি খাবার তালিকায় সুষম খাবার থাকে তাহলে আমরা স্বাভাবিক ভাবে জীবন ধারণ করতে পারব এবং সুস্থ-সবল থাকবো। তাই অবশ্যই আমাদের খাবারের মধ্যে সুষম খাবার তালিকা করা আবশ্যক। কিন্তু আপনার যদি ব্লাড প্রেসার হয়ে যায় তখন আপনাকে অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এমন খাবারগুলো পরিহার করতে হবে। তাই হাই প্রেসার কমানোর খাবার তালিকা কেমন থাকবে তা আপনাদেরকে দেখানো হলো।

  • খাবারের মধ্যে লবণের পরিমাণ কম রাখতে হবে।
  • চর্বিবহুল ও ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
  • চিনিযুক্ত ও মিষ্টি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খাওয়া যাবেনা।
  • ফলমূল এবং শাকসবজি খেতে হবে।
  • রেডমিট বা লাল মাংস হতে বিরত থাকতে হবে। ( খাসির মাংস, গরুর মাংস এবং মহিষের মাংস)।
  • ডিমের সাদা অংশ খেতে হবে।
  • আচার এবং জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

সুতরাং হাই ব্লাড প্রেসার রোগীর খাবার তালিকা এসকল কিছু মাথায় রেখে সুষম খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে।

উপসংহার

হাই প্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ যেহেতু অধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেহেতু আমাদের সকলকেই সতর্কতার সাথে জীবন যাপন করা উচিত। আশা করি আপনারা আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়েছেন এবং জেনে নিতে পেরেছেন হাই প্রেসার এর লক্ষণ গুলো এবং সেইসাথে জেনে নিতে পেরেছেন হাই প্রেসার হলে আমাদের করণীয়, খাবার তালিকা এবং মাপার উপায়। তাই অবশ্যই আমাদের উচিত উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলো নিজের মধ্যে উপলব্ধি করতে পারলে ব্লাড প্রেসার মাপা এবং জেনে নেওয়া এবং প্রয়োজন হলে ঔষধ সেবন করা। এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের মধ্যে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই আপনারা আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। 

তথ্য সুত্রঃ

https://www.cdc.gov/bloodpressure/about.htm

https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/high-blood-pressure/symptoms-causes/syc-20373410

Check Also

ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং কি? ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং একদম সিম্পল বাংলা ভাষায়

ব্যাবসা ও মার্কেটিং দুটি শব্দ যেন একে অপরের পরিপূরক। কারণ, যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *