মধ্যবয়স্ক আকিল সাহেব স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য নিয়মিত হাটেন। তেল মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।কিন্তু ভাত খাওয়ার সময় কাচা লবন খাওয়ার অভ্যাসটি ছাড়তে পারেন নি। একদিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসক তাকে নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপের (High blood pressure) ঔষধ খেতে পরামর্শ দেন।চলুন আজকে জেনে নেই উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী কোনটি বা কোন গ্রন্থি টি।
উচ্চ রক্তচাপ আসলে কি?
একটু বয়স হলেই ব্লাড প্রেসার বাড়ে, এটি একটি ভুল ধারণা। অল্প বয়সেও এই সমস্যা হতে পারে, তবে চল্লিশ পার হলেই উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়।মানুষের শরীরে হৃদপিণ্ডে ধমনীতে রক্তের চাপকে উচ্চ রক্তচাপ বলে আমরা বুঝে থাকি। ধমনীতে প্রবাহিত স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা হল ১২০/৮০ মার্কারি। এই মাত্রা যদি কারো পরপর ২দিন উন্নীত হয়ে ১৪০/ ৯০ বা এর বেশি হয় তবে বলা যায় তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
উচ্চ রক্তচাপের কোন লক্ষণ আছে কি?
সাধারন ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ টেরই পান না যে তিনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী। নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়েও ভাল থাকা যায়। তবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তা হৃদরোগ, হার্টে ব্লক, স্ট্রোকসহ নানা বিপদজনক সমস্যার দিকে ধাবিত করে।
উচ্চ রক্তচাপের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্মণ নেই, তবে কমন কিছু খারাপ লাগা বা অনুভূতি নিয়ে রোগীরা ডাক্তারের নিকট আসেন।যেমন- মাথা ঘোরা, ঘাড়ে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা বা খুব অস্থির লাগা,বমি ভাব ইত্যাদি।
- উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে কিনা এটা নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নিয়মিত প্রেসারমাপক যন্ত্রের সাহায্যে চেক করার মাধ্যমে।
উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়?
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে, উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী কোনটি? এর উত্তর হল মানুষের শরীরের আড্রিনাল নামক গ্রন্থি উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী। উত্তেজিত হলে এই গ্রন্থি থেকে এলডোস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয় যার কারনে রক্তে সোডিয়ামের পরিমান অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়।রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও টেনশনেও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হয়ে থাকে। আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা একে হাইপারটেনশন (Hypertension)নামেও বর্ননা করেছে।
মানবশরীরে কিছু কারনে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধির ঝুঁকি সৃষ্টি হয়ে থাকে।
- অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। যেখানে খাওয়া ঘুম ঠিকমত হয়না। একটা বয়সের পর চর্বিযুক্ত ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার বর্জন করতে হয়। খাবার ও ঘুম এর জন্য সঠিক সময় মেইনটেইন করতে হয়।
- অতিরিক্ত চিনি ও আলগা লবন খাওয়া। বর্তমান সময়ে চিকিৎসকরা সাদা চিনিকে ‘নিরব ঘাতক’ বলেছেন। অন্যদিকে লবন থেকে সোডিয়াম বৃদ্ধি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত লবন শরীরের উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধির জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে দায়ী বলে প্রমাণিত।
- রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা।
- ওজন অতিরিক্ত থাকা। শারীরিক পরিশ্রম না করা।
- চা-কফি, মদপানের অভ্যাস নাহলে বেশি কোমল পানিয় খাওয়া। এগুলোতে অতিরিক্ত চিনি থাকে।
- খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমানে শাকসবজি ও ফলমূল না থাকা।
- বয়স ৬৫ এর বেশি হলে এবং ঘনিষ্ঠ আত্নীয়স্বজনের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে বা টেনশন করলে।
- অপর্যাপ্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করলে।
আরো পড়ুনঃ
ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়?
এছাড়া কিছু রোগ বালাই/শারিরীক সমস্যাও উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যা তৈরি করে।যেমন-
- ডায়বেটিস ও কিডনি রোগ থাকলে
- থাইরয়েডজনিত সমস্যার কারনে। ঘুমের সমস্যা বা স্লিপ এপনিয়া থাকলে
- কিছু ঔষধের প্রতিক্রিয়াও উচ্চ রক্তচাপ হটাৎ বেড়ে যেতে পারে। যেমন, স্টেরয়েডজাতীয়, ঘুমের ঔষধ, কন্ট্রাসেপটিভ পিল ইত্যাদি।
- রক্তনালি সংকীর্ণ হয়ে গেলে
- স্কেলোডারমা নামক ত্বকের রোগ হলে।
উচ্ছন্ন জীবন যাপন আর খাদ্যাভ্যাস মানুষের উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন সৃষ্টির জন্য বহুলাংশে দায়ী। তাছাড়া অতিরিক্ত লবন খাওয়ার সাথেও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার কারন ঘনিষ্ঠ। উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে তা ভয়াবহ রোগ সৃষ্টির কারন হতে পারে। তাই আমাদের এই ব্যপারে সতর্ক থাকা দরকার এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনে উদবুদ্ধ হতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ