কি খেলে টিউমার ভালো হয় এবং টিউমার প্রতিরোধে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কি ধরনের খাবার গ্রহন করা উচিত সে সম্পর্কে তো আমরা বিস্তারিত জানবোই, তার আগে এটা জানাও জরুরি টিউমার কি, কত প্রকার ও টিউমার চেনার উপায়গুলো কি কি।
টিউমার কি?
টিউমার হলো মানব শরীরের ভেতরে বা বাইরে চামড়ার উপর গঠিত মাংসপেশির অস্বাভাবিক সমষ্টি। যেখানে কোষগুলোকে অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাড়তে দেখা যায়। টিউমার শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকারক যদি তা কোন কারনে ক্যান্সারে বিস্তার লাভ শুরু করে তাহলে। টিউমারের ধরন বুঝে এর সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলেই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। এছাড়া কিছু খাবার উপাদান আছে যা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে অনেক ক্ষেত্রেই এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা সম্ভব।আসুন এজমা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে বিস্তারিত জেনে আসি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে।
টিউমার সাধারনত আমরা দুই ধরনের দেখে থাকি।
১.বিনাইন টিউমার।
২.ম্যালিগন্যান্ট টিউমার।
১.বিনাইন টিউমার: এই টিউমারে সাধারনত ভয়ের কোন ব্যাপার থাকে নাহ। এই ধরনের টিউমার চামড়ার উপরে যেকোন সাইজের মাংসপেশির সমষ্টি হয় এতে তেমন কোন প্রকারের ব্যাথা অনুভব হয় না, চাপ দিলে কিংবা হাত লাগলে ব্যাথা অনুভব হবে না। এর আকারে পরিবর্তন কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় না আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়। যদি বিনাইন টিউমার হয়ে থাকে তাহলে খুব একটা ভয়ের কোন কারন নেই। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঠিকমতো চিকিৎসা চলমান রাখলেই সুস্থতা কামনা করা যায়। এছাড়াও খাদ্যাভ্যাসে কিছু খাবার নিয়মিত যোগ করলেও পাওয়া যেতে পারে দারুন প্রতিকার। যা নিয়ে এখানে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা থাকছে।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমার: এই টিউমার শরীরের বাহিরের অংশে যদি হয়ে থাকে তবে সাধারনত তা শক্ত হয়ে থাকে এবং ব্যাথা অনুভব হবে। টিউমার হতে পুঁজ বের হতে পারে, আকারের পরিবর্তন হতে পারে সময়ের সাথে সাথে যা ক্যান্সারের লক্ষন ধরা যায়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসাধীন থাকতে হবে। শুরুতেই চিকিৎসা শুরু করলে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা থাকে।চলুন আজকে জেনে নেই উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী কোনটি বা কোন গ্রন্থি টি।
কি খেলে টিউমার ভালো হয়?
টিউমার প্রতিরোধ ও প্রতিকারে একটি খাদ্য তালিকা সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ সহজ ধারনা দেয়ার চেষ্টা করা হল।
১. মৌসুমি এবং সবুজ শাক সবজি
আমাদের দেশে মৌসুম ভেদে নানা রকম শাকসবজি পাওয়া যায়। খাদ্য তালিকায় নিয়মিত যোগ করতে হবে তাদের। যেমন: হেলঞ্চা শাক, পালং শাক, লেটুস পাতা, ব্রোকলি, সীম জাতীয় সবজি, ক্যাবেজ জাতীয় সবজি যেমন- বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগম, ওলকপি এছাড়াও গাজর যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন এ, মিনারেল, এন্টিঅক্সিডেন্ট, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় যা টিউমার প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য অনন্য ভুমিকা রাখে। তাছাড়া স্প্রাউটে (যেকোন বীজ জাতীয় সবজি হতে বের হওয়া সদ্য শিশু ভ্রুন) রয়েছে থায়োসায়ানেট নামক ফাইটোক্যামিক্যাল। যা টিউমার এবং ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য মহাঔষধ।
২.মাশরুম
আমরা সবাই কমবেশি আশা করি মাশরুম চিনি। মাশরুম হচ্ছে একপ্রকার ছত্রাকজাতীয় উদ্ভিদ যা কিছু ব্যাসিডিওমাইকোটা এবং কিছু অ্যাসকোমাইকোটার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে এই খাবারের চাহিদাও অনেক।এতে রয়েছে আমিষ, শর্করা, চর্বি ও ভিটামিন, মিনারেলের দারুন সমন্বয়। এই খাবার ভেষজগুনে ভরপুর। ১০০ গ্রাম মাশরুমে রয়েছে প্রায় ২৫-৩০% প্রোটিন। যা ১০০ গ্রাম মুরগী কিংবা মাছেও পাওয়া যায় নাহ। মাশরুমে রয়েছে এন্টিক্যান্সার ও এন্টি টিউমার প্রোপার্টি। এমনকি কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য ও এটি একটি দারুন পুষ্টিকর খাদ্য। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় অন্তত সপ্তাহে ২ বার মাশরুম রাখার চেষ্টা করলে বেশ উপকার পাওয়া যেতে পারে।
৩.দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য
আমরা জানি দুধ একটি সুষম বা আদর্শ খাদ্য।দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এবং প্রোটিন যা আমাদের শারীরিক মোটামুটি সব চাহিদা মেটাতে সক্ষম। হাঁড় ও দাত মজবুত করতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর সুত্রে ধরে এটাও বলা হয় দুধ টিউমার এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমায়।
আরো পড়ুনঃ
ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়?
৪.হলুদ
হলুদ সাধারনত পাউডার ফর্মে আমরা মসলা হিসেবে আমাদের দৈনন্দিন রান্নায় ব্যবহার করে থাকি। হলুদ এক প্রকার এন্টিবায়োটিক হিসেবে আমাদের শরীরে কাজ করে।এছাড়া হলুদে রয়েছে কারফিউমিন নামক একটি যৌগ যা দেহের প্রদাহ দূর করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে রাখে সুস্থ।এটি অগ্নাশয়ের ক্যান্সার রোধে কাজ করে।নতুন টিউমার হওয়া রোধ এবং রক্ত উৎপাদনে ভুমিকা রাখে।গরম দুধের সাথে মিশিয়ে কিংবা সকালে ঘুম থেকে উঠে এক টুকরো কাঁচা হলুদ খেতে পারলে শুধুমাত্র টিউমার নয় বরং নানা বিধ শারীরিক সমস্যা হতে মুক্ত থাকা যায়।
৫.মাছ
সহজ কথায় আমরা মাছে ভাতে বাংগালি।বাংলাদেশের মানুষ এমনিতে মাছ খেতে ভালোবাসে এবং আমাদের দেশীয় মাছের পূষ্টি অতুলনীয়।মলা ঢেলা ছোট মাছে রয়েছে প্রচুর এন্টি ক্যান্সার উপাদান এবং ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি এসিড যা ক্যান্সার এবং টিউমার প্রতিকার ও প্রতিরোধে বেশ ভালো ভুমিকা রাখে।
শেষান্তে…
রোগ, অসুখ-বিসুখ এসব আমাদের জীবনেরই অংশ। শরীরের যেকোন স্থানে যেকোন সময় টিউমার দেখা দিতে পারে। সুতরাং এটি নিয়ে অস্থির না হয়ে ভয় না পেয়ে চেক আপ করিয়ে নিন। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহন করুন। এছাড়া সুস্থ ও সুন্দর নিরোগ থাকার জন্য একটি সঠিক, স্বাস্থ্যসম্মতও ব্যালেন্সড খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহন হতে যথাসম্ভব বিরত থাকুন। এতে করে শুধুমাত্র টিউমার নয় যেকোন রোগের ঝুঁকি কমে আসবে বহুগুন।এছাড়াও মানসিক ভাবে নিজেকে সুন্দর, সুস্থ ও শক্ত রাখার চেষ্টা করুন।আশা করি আপনাদের টিউমার প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের খাদ্য তালিকা নিয়ে অনেকটাই তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পেরেছি। সকলের সুস্থতা কামনা করি।
তথ্যসূত্রঃ
https://jamanetwork.com/journals/jamaoncology/fullarticle/2768634