হার্টের হারের পরিবর্তনে তারতম্য হল গুরুতর হাটে অবস্থান লক্ষণ। হৃদরোগ থেকে শরীরকে বাঁচাতে স্পন্দের ভারসাম্য সঠিক হওয়া দরকার। বুকের চাপ অনুভব, মাথা ঝিমঝিম ও সহজেই ক্লান্তির মত সমস্যাগুলো দেখে দিলে বুঝবেন আপনার হার্টের সমস্যা আছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ঘাম হলে হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ দেখা দেয়। চিকিৎসকদের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক সাধারণত প্রতি মিনিটে সাইট ৬০ থেকে ১০০ বিট পর্যন্ত হার্ট চলাচল করে।
মানসিক বা শারীরিক চাপের কারণে শ্বাস-প্রসার দ্রুত চলাচল করলে হৃদপিণ্ড দ্রুত প্রসারিত হয়। আমরা যখন দৌড় দেই, তখন হার্টের রেট বেড়ে যায়। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় যখন মানুষের শ্বাসকষ্ট হয়, হার্টের রেট কমতে থাকে, হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।
হার্টের সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়
১। বুকের মাঝ বরাবর ব্যথাঃ হার্ট সার্জারি বিশেষজ্ঞদের মতে হার্ট অ্যাটাকের প্রথম উপসর্গই হচ্ছে বুকে ব্যথা। বুকের ডান বা বাম পাশে ব্যথা হবে না। একেবারে বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা হবে। একে সেন্ট্রা চেস্ট পেন বলা হয়ে থাকে। এই ব্যথা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তীব্রতা কেমন হবে তা বর্ণনা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন মনে হবে যেন বুকের মধ্যে ছুরি চালাচ্ছে বা বুকের মধ্যে হাতি পাড়া দিচ্ছে এবং বুকের হাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে।
২। হাত ও ঘাড় ব্যথাঃ বিশেষজ্ঞদের মতে বুকের ব্যথা একসময় বাম হাত ও ঘাড়ের দিকে ছড়িয়ে পড়বে। যাকে বলা হয় ব্যথাটা রেডিয়েট করা।
ব্যথা যদি ঘাড়ে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে মনে হবে যেন গলার মাংসপেশিকে চেপে ধরেছে। তাদের ডায়াবেটিস থাকে তাদের ব্যথা বোঝার ক্ষমতাটা কম থাকে। যার কারণে তাদের অনেক সময় বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল তারা টের পায় না।
যাদের দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আরো বিপদ হতে পারে বলে বিশেষণ করা মনে করেন।
৩। পেটে তীব্র ব্যথাঃ বুকের প্রচণ্ড ব্যথা অনেক সময় পেটে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথাকে অনেকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করতে পারেন। বিশেষ করে যাদের দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে বেশিরভাগ সময় তারা বুঝতে পারে না যে সেটি আসলে কীসের ব্যথা।
৪. কাশি ও শ্বাসকষ্ট ; যদি হার্ট অ্যাটাকের পর হার্ট ফেইলরের দিকে যায় তাহলে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হবে। হার্ট ফেইলর হলে বা অকেজো হয়ে পড়লে ফুসফুসে পানি আসে। এর কারণে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা যদি জরুরী ভিত্তিতে না নেওয়া হয়, তাহলে হার্ট আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে, ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।
তখন সারা দেহে পানি এসে পড়ে।এর মধ্যে প্রথমেই পানি আসে ফুসফুসে। এর ফলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়। এটি হার্ট অ্যাটাকের পর হার্ট ফেইলরের একটা উপসর্গ।
৫. অতিরিক্ত ঘাম; ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, শরীর চর্চা করার সময় বা খুব গরমে যদি ঘাম হয় তাহলে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি বুক ব্যথার সাথে সাথে প্রচণ্ড ঘাম হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ সেটি হার্ট অ্যাটাকের একটি লক্ষণ।
৬. অজ্ঞান হয়ে যাওয়া; যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা-সিডিসি’র তথ্য অনুযায়ী, দুর্বল অনুভব হওয়া, মাথা ঘোরা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।
হার্ট ব্লক এর কারণ
বিশ্বে প্রতি বছর ৩৮ লাখ পুরুষ এবং ৩৪ লাখ মহিলা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তার মধ্যে প্রতি ৪ জনের একজনের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে করোনারি হার্ট ডিজিজ বা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ যা মূলত এথোরোসক্লেরোসিস এর ফলাফল।
অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়া, মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়াও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। অতিরিক্ত ঘাম হওয়া: অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হওয়া ছাড়াও অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড়, হঠাৎ শরীর খারাপ লাগতে শুরু করলে অব্যশই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
হার্টের মাংশপেশী সমূহ সচল থাকার জন্য হার্টের মধ্যে রক্ত সরবরাহ হয় দুইটা রক্ত নালীর মাধ্যমে যাকে রাইট এন্ড লেফট করোনারি আর্টারি বলে। এই করোনারি আর্টারি সমূহে ফ্যাট কিংবা চর্বি জমে যদি রক্ত সঞ্চালনে বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে এই অবস্থাকে করোনারি আর্টারি ডিজিজ বলে এই অবস্থাকে আবার হার্ট ব্লক ও বলা হয় আর ফ্যাট জমে আর্টারি মোটা আর শক্ত হয়ে যাওয়াকে এথোরোসক্লেরোসিস বলে।
এথোরোসক্লেরোসিস হলে যে কোনো মুহুর্তে রক্তনালি ছিড়ে রক্ত জমাট বেধে যেতে পারে। রক্তনালীর ভিতর যদি রক্ত জমাট বাধে তাহলে সেখানে রক্ত চলাচল করতে পারবে না, হার্টের রক্তনালীতে যদি রক্ত চলাচল করতে না পারে তাহলে হার্টের মাংসপেশি সমূহ অক্সিজেন পাবেনা, অক্সিজেন না পেলে হার্টের টিস্যু সমূহ ড্যামেজ হতে থাকবে এবং এইভাবে হার্টের রক্তনালীতে রক্তজমাট বাধার কারণে
কিংবা শরীরের অন্য কোনো ধমনীতে রক্ত জমাট বেধে তা থ্রম্বোসিস হয়ে তথা রক্তনালী দিয়ে পরিবাহিত হয়ে যদি করোনারি আর্টারি সমূহকে কিংবা হার্টের ধমনী সমূহকে ব্লক করে দেয় এবং হার্টের পেশীসমূহে যদি পরিমিত অক্সিজেন দিতে না পারে তখন অক্সিজেনের অভাবে হার্টের টিস্যু সমূহ ড্যামেজ হয়ে যাবে যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক বলা হয়।
এই সময় খুব দ্রুত রক্ত সরবরাহ চালু করতে না পারলে মৃত্যু হতে পারে। এই সময় রোগীর প্রচন্ড বুকে ব্যাথা হবে, সাথে শ্বাসকষ্ট হবে, শরীর ঘামিয়ে যাবে, ব্যাথা ঘাড়, হাত, পিঠে বা থুতনিতে যেতে পারে।
আরও পড়ুন- রক্তে অ্যালার্জি দূর করার উপায়
ইশকেমিক হার্ট ডিজিজের উপসর্গ:
ব্লাড প্রেশার চেক করা না হলে অধিকাংশ রোগী উপসর্গহীন থাকে এবং এক সময় তারা হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যু বরণ করে। আর কারো কারো ক্ষেত্রে নিম্নের কিছু উপসর্গ দেখা দেয়:
- ১। চলতে ফিরতে বুকে ব্যাথা হয়
- ২। শ্বাসকষ্ট হয়
- ৩। খাবার পরে বুকে ব্যাথা হয়,
- ৪। একটু টেনশন করলে বুকে ব্যাথা হয়,
- ৫। মাথা ঘোরানো এবং মাথা ব্যাথা
- ৬। ঘাড় কিংবা বাহুতে ব্যাথা
- ৭। বমি বা বমির ভাব
ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের কারণ:
- ১। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন
- ২। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যথা গরুর গোশত, ডিম বা ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার ইত্যাদি
- ৩। সিগারেট স্মোকিং বা জর্দা ইত্যাদি
- ৪। অবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন
- ৫। এলকোহল, কোমল পানীয়
- ৬। পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করা
- ৭। শারিরীক পরিশ্রম না করা
- ৮। সবসময় শুয়ে থাকা ইত্যাদি।
ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের কারণে জটিলতা:
- ১। হার্ট অ্যাটাক হতে পারে
- ২। ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে
হার্টের রোগের প্রতিকার:
- ১। ধূমপান ত্যাগ করতে হবে
- ২। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
- ৩। ওজন স্বাভাবিক বিএমআই অনুযায়ী রাখা জরুরি। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- ৪। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে এবং লবণ কম খেতে হবে।
- ৫। নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত
- ৬। স্বাভাবিক শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত।
হার্টের চিকিৎসা
- ১। লাইফস্ট্যাইল মোডিফাই করতে হবে এবং অতিরিক্ত ওজন কমার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
- ২। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সে জন্য নিয়মিত রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত খেয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মেডিসিন বাদ দেয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে খুব খেয়াল রাখতে হবে। কোন মেডিসিন যেন খেতে ভুলে না যায়। এছাড়া যে কোন জটিলতায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বুকে ব্যাথা হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে।