ত্বক উজ্জ্বল রাখার উপায়

ত্বক উজ্জ্বল রাখার উপায়

উজ্জল, দাগহীন , মসৃণ ত্বক আমাদের কার না ভালো লাগে? ধুলাবালি, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন , অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য আমাদের ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। দৈনন্দিন জীবনে কাজের চাপে অথবা সময়ের অভাবে বেশিরভাগ সময় আমরা পার্লারে যেতে পারি না।

তাই আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করব কিভাবে তোকে সুন্দর ও উজ্জ্বল রাখা যায়। তাই আশা করছি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি উপকৃত হবেন। চলুন দেখা যাক আমাদের আজকের আর্টিকেলটি

কিভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবেন?

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আমাদের কিছু উপায় ব্যবহার করতে হবে। আমরা যদি এই নিয়মগুলো স্টেপ বাই স্টেপ পালন করতে পারি তাহলে হয়তো ঘরে বসেই তবে উজ্জ্বলতা বাড়াতে পারবেন। এমনি নিয়ম গুলো দেওয়া হলঃ

১। মধুঃ মধু এমন একটু প্রাকৃতিক উপাদান উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বক নরম রাখে, বলিরেখা ও কাল সেভাব দূর করে। এছাড়া ব্রণের জীবাণুও ধ্বংস করতে সাহায্য করে। কম সময়ে উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে মধুর কোন বিকল্প নেই মধু সরাসরি মুখে লাগাতে পারবেন, কিন্তু বেশি ফলাফল পেতে হলে মধুর সাথে , দুই , দুধ , কলা , পেঁপে , লেবুর রস এসব কিছু মিশিয়ে লাগাতে হবে।

২। মসুর ডালঃ মসুর ডাল ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মসুর ডাল বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভেজা মসুর ডাল বেটে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করতে হবে তারপর সেটাকে মুখে লাগাতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। কথা না বলাই ভালো, মুখে ডাল শুকিয়ে যাওয়ার পর কথা বললাম। তাই আমরা যখন লাল মুখে লাগাবো তখন কথা বলবো না।

৩। পাতিলেবুর রসঃ পাতিলেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করেন। কিন্তু সরাসরি লেবুর রস ত্বকে লাগাবেন না। এর প্রভাবে ত্বকে তীব্র জ্বালাভাব ও নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই সরাসরি লেবুর রস না লাগিয়ে তার সাথে অন্য কিছু মিশিয়ে লাগাতে পারেন। ১ চামচ লেবুর রসের সাথে ১ চা চামচ চিনি মিশিয়ে সার্কুলার মোশনে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। চিনি গলে গেলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস ব্যবহার করার পর অতি অবশ্যই ভালো কোনও ময়েশ্চরাইজার লাগিয়ে নিবেন। পাতিলেবুর রস ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

৪।শসাঃ শসা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে অনেক ভালো কাজ করে। তিন টেবিল চামচ শসার রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। কাচের মুখবন্ধ বয়ামে মিশ্রণটি সংরক্ষণ করুন। দিনে কয়েকবার এই মিশ্রণ দিয়ে মুখ মুছে নিন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে ও ত্বককে কোমল রাখবে।

৫।টক দইঃ টক দইয়েও এমন উপাদান রয়েছে যা ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। দই আধ ঘণ্টা মুখে মেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের কালো ছোপ বা অন্যান্য সমস্যা এতে দূর হবে, ত্বক উজ্জ্বল হবে

৬।দুধের ব্যবহারঃদুধ ক্লেনজার হিসাবে দারুণ কাজ করে। ত্বকে কাঁচা দুধ মাখুন। ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করে নরম কাপড় দিয়ে ধুয়ে নিন।

৭।ডিমের সাদাঃ অংশডিমের সাদা অংশ ডিমের সাদা অংশ ত্বকের উপকারে আসে। এটি ত্বকে লাগিয়ে তার উপরে টিস্যু পেপার দিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে টেনে তুলে ফেলুন। এর ফলে মুখে থাকা ব্ল্যাক ও হোয়াইট হেডস উঠে আসবে।

৮।গরম ভাপ নেওয়াঃত্বকের মধ্যে থাকা ছোটো ছোটো ছিদ্রগুলি গরম জলের ভাপ নিলে খুলে যায়। ফলে সেখানে জমে থাকা ধুলো-ময়লা বেরিয়ে এসে ত্বক উজ্জ্বল করে।

৯।হাইড্রেটেড থাকুনঃ হাইড্রেটেড থাকুন ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া খুবই প্রয়োজন। এতে শরীরের স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকে। ফলে ত্বকে সহজে ভাঁজ পড়ে না।

১০।পরিমিত ঘুমঃপরিমিত ঘুম সারাদিন আপনি যাই করুন না কেন, রাতে পরিমিত ঘুম অবশ্যই প্রয়োজন। ভালো ঘুম না হলে ত্বকের যেমন ক্ষতি, তেমনই শরীরেরও নানাভাবে ক্ষতি হয়।

কোন ধরনের খাবার খেলে ত্বক উজ্জ্বল থাকবে

আপনি কি মসৃণ, উজ্জ্বল ত্বকের স্বপ্ন দেখেন? ত্বকের যত্নে নানা ধরনের কসমেটিক্স ব্যবহার করার পরও যদি আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকে, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অপরিসীম। আজ আমরা জানব কিছু খাবার সম্পর্কে যা খেলে আপনার ত্বক প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।

পানি: ত্বকের প্রাণশক্তি

পানি হলো শরীরের প্রধান উপাদান। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে ত্বকের কোমলতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। পানি শরীরের টক্সিন দূর করে এবং ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে। যখন শরীরে পানির অভাব হয়, তখন ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং ব্রণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর ত্বকের জন্য প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত।

গ্রিন টি: ত্বকের রক্ষাকবচ

গ্রিন টি শুধু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়, এটি ত্বকের যত্নেও একটি অত্যন্ত কার্যকর উপাদান। গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এনজাইম, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি রয়েছে। এই উপাদানগুলো ত্বকের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। গ্রিন টি শরীরে জমে থাকা টক্সিন দূর করে এবং ত্বকের দাগ-ছোপ, কাটা দাগ এবং লালচে ভাব কমাতে সাহায্য করে।

টমেটো

ত্বকের যত্নে টমেটো ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। টমেটোতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি। যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে দারুণ সহায়ক। টমেটোতে ‘লাইসোপিন’ নামক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে। যা ত্বকের বিভিন্ন দাগ, বলিরেখা ও শুষ্কভাব দূর করে ত্বককে মসৃণ করে। এটি সানস্ক্রিন হিসেবেও দারুণ কার্যকর।

গাজর

নিয়মিত গাজর খেলে ত্বক হবে সজীব ও উজ্জ্বল। গাজর ত্বকের টিস্যু মেরামত করে এবং ক্ষতিকর সূর্য রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সহায়তা করে। তাছাড়া গাজরে আছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। যা শরীরে গিয়ে ভিটামিন-এ তে পরিণত হয়। ভিটামিন-এ ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

বাদাম

বাদামে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন-ই। খাদ্য তালিকায় বাদাম রাখলে এর পুষ্টি উপাদানগুলো ত্বককে আরও সজীব ও লাবণ্যময় করে তুলবে।

কলা

ত্বক ভালো রাখার জন্য কলা অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন-এ, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পাশাপাশি এটি ত্বকের মলিনতা দূর করতেও কার্যকর।

গরমে ত্বক ভালো রাখার উপায়

প্রচণ্ড গরমে সুস্থ থাকতে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। ত্বকের সুস্থতার প্রতিও বাড়তি খেয়াল রাখুন। নইলে ত্বক হয়ে পড়বে নিষ্প্রাণ। গরমে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে পর্যাপ্ত। তাতে ত্বকের কোষও থাকবে সতেজ। ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া পানির ঘাটতি যেমন পূরণ করতে হবে, তেমনি ঘামে চিটচিটে হয়ে যাওয়া ত্বক পরিষ্কারও রাখতে হবে ঠিকঠাক। তবেই ত্বক থাকবে সুস্থ, উজ্জ্বল।

ফল খেতে হবে বেশি করে

ফল খেতে হবে রোজ। তরমুজ, বাঙ্গি, আপেল, আনারস, নাশপাতি, পেয়ারা, জামরুল, জাম্বুরা, হানিডিউ, শসা, গাজর—রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন এসব ফল। কাজের ফাঁকে ক্ষুধা মেটাতে অন্য কোনো নাশতার আয়োজন না করে পানি, ফল বা ফলের রস খাওয়া যেতে পারে। ফল ও ফলের রসে মিটবে পানির চাহিদা, পাওয়া যাবে নানা পুষ্টি উপাদান। তবে ফলের রস বা অন্যান্য পানীয় গ্রহণের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন, তাতে যেন চিনি যোগ করা না থাকে। আরও মনে রাখতে হবে, ঘরে তৈরি পানীয়ই স্বাস্থ্যকর। আবার যাঁরা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে সময় যাপন করেন, তাঁদেরও কিন্তু পানি ও তরল খাবার খেতে হবে ঠিকঠাক।

গরমে ত্বক ভালো রাখার উপায়

যেভাবে ত্বক উজ্জ্বল রাখবেন

শসার রস নিন ২ চা-চামচ, সঙ্গে ১ চা-চামচ টক দই, ১ চা-চামচ বেসন আর ১ চা-চামচ মধু। মাস্কটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করলে ত্বকের দাগছোপও কমে আসবে। ত্বক হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত।

চন্দনের গুঁড়ার সঙ্গে প্রয়োজনমতো তরল দুধ যোগ করুন, যাতে মিশ্রণটি ফেসপ্যাকের মতো ঘন হয়। এই প্যাক সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে বলিরেখাও কমে আসে।

গুঁড়া দুধ নিন ১ টেবিল চামচ। সমপরিমাণ পানি দিয়ে গুলিয়ে নিন। মসুর ডালের বেসন নিন ১ টেবিল চামচ। সঙ্গে নিন ২ টেবিল চামচ ডাবের পানি আর আধা চা-চামচ মধু। মিশ্রণটি লাগিয়ে রাখতে হবে ২০ মিনিট। রাহিমা সুলতানা জানালেন, এই প্যাক ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে সতেজ, রোদে পোড়া দাগও দূর হবে। ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহে একবার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top