রক্তের একটি ক্ষুদ্র কনিকা হল প্লাটিলেট। প্লাটিলেট মূলত রক্তকে জমাট বাধায়। আর এটাই আমাদের সুস্থ থাকার নিশ্চয়তা দেয়। মানবদেহে স্বাভাবিকভাবে দেড় থেকে সাড়ে চার লাখ থাকে প্লাটিলেটের মাত্রা। কোন কারনবশত, এটি ২০ হাজার থেকে নিচে নামতে থাকলে, ইন্টারনাল ব্লিডিং এর ঝুকি থাকে। এর প্রধান কারন হলো প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া কিংবা শরীরে নতুন করে প্লাটিলেট তৈরি না হওয়া।
ডেঙ্গু রোগের সময়ে প্লাটিলেট স্তর কমতে পারে, যদি এটি অধিক মাত্রায় কমতে শুরু করে তাহলে, এটি রোগীর জন্য মৃত্যু ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর নির্দেশনা মোতাবেক সচেতনভাবে ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা অনুসরন করা উচিত, এতে করে রক্তে প্লাটিলেট এর পরিমান বাড়ে।
আমরা জানি, বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বর এর ভয়াবহতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। যেহেতু ডেঙ্গুর কোন নির্ধারিত ঔষধ আবিস্কার হয়নি, তাই অবশ্যই নিয়ম করে এমন সব খাবার খেতে হবে যাতে করে রক্তে প্লাটিলেট বেড়ে যায়।
একজন ডেঙ্গু রোগীর পক্ষে কখনোই বোঝা সম্ভব না যে তাকে ঠিক কোন খাবার তালিকা অনুসরন করা উচিত। খাবার সচেতন হলে, ডেঙ্গু রোগী তার শরীরিক অবস্থার উন্নতি করতে পারবে এবং এতে করে রোগের প্রভাব কম হতে পারে। ডেঙ্গু স্পেশালিস্ট বা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে প্রতিদিনের পুষ্টিতত্ত্বের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আসুন তাহলে জেনে নেই প্লাটিলেট বাড়াতে ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা হিসেবে কোন খাবার গুলো খাওয়া উচিত।
ডেঙ্গু রোগীরা যেসব ফল খেতে পারেনঃ
পেঁপে (Papaya): পেঁপে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল যা প্লাটিলেট স্তর বাড়াতে সাহায্য করে। এর মধ্যে ভিটামিন C থাকে, যা প্লাটিলেট বাড়ানোর জন্য উপকারী। পেঁপে পাতার রসও ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট স্তর দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এতে প্রচুর পরিমানে এনজাইম এবং ভিটামিন C থাকে যা প্লাটিলেটের নির্মাণে সাহায্য করে। ডেঙ্গু রোগে পেঁপে পাতার রস বা চা তৈরি করে খাওয়া হয়।
ডালিম (Pomegranate): ডালিম এমন একটি ফল যা বিশেষভাবে প্লাটিলেটের নির্মাণ বাড়াতে সাহায্য করে। এটি আন্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত একটি ফল। ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ডালিম রাখা উচিত।
মিষ্টি আম (Sweet Mango): মিষ্টি আমে অনেক প্লাটিলেট স্তর বাড়ানোর গুন থাকে। মিষ্টি আমে অধিক পরিমানে ফলিক এসিড ও ভিটামিন C আছে, যা প্লাটিলেটের পরিমান অনেকাংশে বাড়ায়।
ড্রাগন ফল(Dragon): ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও আয়রন আছে। ড্রাগন ফল রক্তে অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গুর চিকিৎসায় এই ফল খুবই কার্যকর হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে কিনা জানতে লিঙ্কে ক্লিক করুন
কিউই (Kiwi): কিউই একটি অন্যতম খাবার যা প্লাটিলেট অনেক বাড়িয়ে দেয়। এটি ভিটামিন C, ভিটামিন K, পটাসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টিতত্ত্বের উৎস।
জাম্বুরা (Pomelo): জাম্বুরা আমাদের দেশীয় ফল যা অত্যন্ত উপকারী। এটি প্লাটিলেট স্তর বাড়াতে সহায়তা করে। এটি ফোলিক এসিড ও অন্যান্য পুষ্টিতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
কমলা (Orange): কমলা রক্তে প্লাটিলেট স্তর বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এটি ভিটামিন C এবং অন্যান্য পুষ্টিতত্ত্বের উৎস।
স্ট্রবেরি (Strawberry): স্ট্রবেরি অনেক ভিটামিন C এবং ফাইবার ধারণ করে যা কিনা প্লাটিলেট স্তর বাড়াতে অসামান্য ভূমিকা পালন করে। এই ফলগুলি ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট স্তর বাড়াতে সাহায্য করে, কারণ এদের অনেক পুষ্টিগুন, ভিটামিন, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
প্লাটিলেট বাড়াতে ডেঙ্গু রোগীরা আর কি কি খাবার খাবেনঃ
ডেঙ্গু হলে কি খাবার খেতে হবে এটা নিয়ে অনেকেই হীনমন্যতায় ভুগেন। নিচের উল্লেখিত খাবার গুলো ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই অনায়াসেই এই খাবারগুলো তারা খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কি?
মাংস: ডেঙ্গু রোগীর খাবার হিসেবে মাংস হলো প্রোটিন এবং আয়রনের অত্যন্ত ভাল উৎস। ডেঙ্গু রোগীর জন্য অত্যাধিক উপকার যা কিনা প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে।
ডাল (Pulses): ডাল প্রোটিন ও আয়রনের উৎস এবং প্লাটিলেট স্তর বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ডেঙ্গু রোগীরা মসুর ডাল, তুড় ডাল, মুগ ডাল, চানা, বুটের ডাল, ইত্যাদি ডাল খেতে পারেন।
মিষ্টিকুমড়া ও কুমড়ার বীজ: রক্তে প্লাটিলেট তৈরির মূল্যবান উপাদান ভিটামিন ‘এ’ মিষ্টিকুমড়ায় রয়েছে যা রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে সক্ষম। শুধু তাই নয় মিষ্টিকুমড়ার বীজেও রয়েছে প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপাদান। তাই যদি কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হবার পর রক্তে প্লাটিলেট কমে যায়, সে তার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় মিষ্টিকুমড়া ও মিষ্টিকুমড়ার বীজ রাখে। নিয়মিত খেলে প্লাটিলেট অনেকটা বেড়ে যাবে আশা করা যায়।
দুধ এবং ডেয়রি প্রোডাক্টস: দুধ, দই, ছানা, পানির দুধ, চীজ, ইত্যাদি ডেয়রি প্রোডাক্টস প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ।
ড্রাই ফ্রুটস ও নাটস: ড্রাই ফ্রুটস ও নাটস প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টিতত্ত্বের উৎস হতে পারে। ডেঙ্গু রোগীরা বাদাম, কাজু, পেস্তা, বেদানা, ইত্যাদি খেতে পারেন।
সয়াবিন (Soybean): সয়াবিন একটি উচ্চতর প্রোটিন এবং আয়রনের উৎস হতে পারে এবং প্লাটিলেট স্তর বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
ডেঙ্গু রোগীরা প্লাটিলেট স্তর বাড়াতে বেশ কিছু লিকুইড খাবার খেতে পারেন, যা তাদের শারীরিক অবস্থা উন্নতি করে।
ডাবের পানি (Coconut Water): কোকোনাট ওয়াটার একটি উত্তম লিকুইড সোর্স হতে পারে, যা ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট স্তর বাড়াতে উত্তম ভূমিকা পালন করে। এটি শারীরিক অবস্থার উন্নতি করে এবং ডেঙ্গু রোগে পানিশুন্যতা রোধ করতে সাহায্য করে।
পুদিনা পানি (Mint Water): পুদিনা পানি একটি উত্তম লিকুইড যা প্লাটিলেট স্তর বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ডেঙ্গু রোগে ত্বক শীতল করতে সাহায্য করে এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করে।
লেবুর জুস (Lemon Water): লেমন ওয়াটার একটি ভালো লিকুইড খাবার যা প্লাটিলেট স্তর বাড়ায়, এটি ভিটামিন C এবং অন্যান্য পুষ্টিতত্ত্বের উৎস হতে পারে যা প্লাটিলেট স্তর নির্মাণে সাহায্য করে।
যদিও এই খাবারগুলি ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট বাড়িয়ে দেয় এবং শারীরিক অবস্থার উন্নতি সাধন করতে পারে, এরপরেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই খাবারগুলি গ্রহন করা গুরুত্বপূর্ণ। কারন বয়স, লিঙ্গ ভেদে সকলের জন্য খাদ্য তালিকা ভিন্ন হতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ
Retrieved from vinmec:
Retrieved from godigit:
https://www.godigit.com/health-insurance/food-guides/food-to-eat-in-dengue