টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ

ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া রিতু গতরাতে আইসক্রিম খাওয়ার পর থেকে গলাব্যথায় কিছু খেতে পারছেনা। তার গলা ফুলে আছে, এমনকি ঢোক গিলতেও কষ্ট হচ্ছে। আজ সকালে মা দেখলেন রিতুর জ্বর চলে এসেছে।ডাক্তার শুনে বললেন, এ সমস্ত লক্ষনই টনসিলাইটিস এর।

টনসিলাইটিস বা টনসিল ইনফেকশন খুবই সাধারণ এবং একইসাথে এটি কষ্টদায়ক রোগ। সাধারনত শীতকালে বা ঠান্ডা লাগার কারনে, বিশেষ করে শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। টন্সিলের উৎপত্তি গলায় এবং এটির প্রধান উপসর্গ গলাব্যাথা দিয়ে শুরু।আজকের এই আর্টিকেলে আমরা টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করব।

টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ

টনসিল ইনফেকশনের উৎপত্তিঃ

আমাদের গলার পিছনের দিকে অবস্থিত দুটি লসিকা গ্রন্থি আছে, যার নাম টনসিল/প্যালাটিন। এই গ্রন্থি মুলত শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কাজ করে, শ্বেত রক্ত কনিকা প্রদান করে অর্থাৎ শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। এইসব গ্রন্থিতে প্রদাহ হলে বা জীবানু দ্বারা সংক্রমিত হলে তাকে টন্সিলাইটিস বা টনসিল ইনফেকশন বলে। সাধারনত ঠান্ডা থেকেই টনসিল হয়। ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের বিটা-হেমলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়া টনসিলে আক্রান্ত করে।

টনসিলের লক্ষণসমূহ

টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণঃ

টনসিল সাধারণত দুই/তিন ধরণের হয়ে থাকে। একটি হল একিউট টনসিলাইটিস, শিশুদের ক্ষেত্রে এটি হয়ে থাকে। তবে ইনফেকশন যদি মারাত্মক আকার ধারণ করে বা বারবার টনসিলে প্রদাহ হয় তবে সেটিকে ক্রনিক বা রিকারেন্ট টনসিলাইটিস বলে। এর লক্ষণগুলো নিম্নরূপঃ 

১। গলাব্যথা, সেইসাথে ঢোক গিলতে সমস্যা এবং শরীরে ক্লান্তিভাব থাকে।

২। গলাব্যথার সাথে জ্বর ১০২-১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে, খাদ্য গ্রহণে অরুচি ও বমিভাব থাকে।

৩। টনসিলের কারনে কানে ব্যথা থাকতে পারে যেহেতু গলার সাথে কানের সম্পর্ক রয়েছে। খারাপ পর্যায়ে কান থেকে পুঁজ পড়তে পারে।

৪। ছোট শিশুদের মুখ দিয়ে লালা পড়তে পারে।

৫। ইনফেকশন তীব্র হলে শ্বাসনালী ও খাদ্যগ্রহনের রাস্তা বাধাগ্রস্থ হয় এবং মুখ খুলতেও কষ্ট হয়ে থাকে।

৬। কোন কোন সময়ে শ্বাসকষ্ট ও রাতের বেলা কাশি হয়। কাশতে গেলে তীব্র অস্বতি বোধ হয়।

৭। ঘুমানোর সাথে সাথে নাক ডাকা শুরু হতে পারে।

৮। স্লিপ এপনিয়ার সমস্যা হতে পারে অর্থাৎ ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া।

৯। ঘন ঘন টনসিল হলে বাতজ্বর হতে পারে।

১০। মুখে দুর্গন্ধ হয়।

শিশুর টনসিল সমস্যা

শিশুর টনসিল সমস্যাঃ

সাধারণত, ৫-১৫ বছর বয়সী শিশু জীবনের কোন না কোন এক সময়ে টনসিলে আক্রান্ত হতে পারে। বারবার ঠান্ডা-সর্দি লাগা, একবার ঠান্ডা লাগলে তা ভাল হতে না চাওয়া, ঠান্ডা পানীয় বা ঠান্ডা খাবারে আসক্তি থাকলে শিশু টনসিলে আক্রান্ত হতে পারে। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে টনসিল ইনফেকশন ক্রনিক হয়ে যেতে পারে। 

এছাড়া যেহেতু এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মাধ্যমে হয়, তাই এই ভাইরাস রোগীর  সংস্পর্শে আসলে ছড়ায়। এই জন্যে স্কুলে শিশুদের কারো টনসিল হলে তার থেকে আরেকজনের হতে পারে কেননা স্কুলে একসাথে অনেক শিশুর মেলামেশা হয়ে থাকে। আক্রান্ত শিশুকে তাই বাসায়ই যত্নে রাখা উচিত।

টনসিল হলে গলাব্যথার কারনে বাচ্চাদের খাবারে অরুচি হয়ে থাকে, মেজাজ খিটখিটে থাকে এমনকি মুখ দিয়ে লালা পড়তেও দেখা যায়।এজমা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে বিস্তারিত জেনে আসি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে।

চিকিৎসা কি

চিকিৎসা কিঃ

একিউট টনসিল হলে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসায় টনসিল নিরাময় করা যায়। যেমন-

  • গরম পানি লবন দিয়ে গার্গেল করলে ব্যথায় আরাম পাওয়া ঘায়। অনেকেই বলেন গরম পানি ও লবন টনসিলের জন্য খুবই কার্ধকরি একটি দাওয়া কারন এতে ব্যাকটেরিয়া নিধন ও গলা পরিষ্কার দুটিই হয়।
  • গরম পানি ও চা খাওয়া। অবশ্যই সেটি হতে হবে গ্রীন টি বা আদাকুচি/লং এর চা মধু সহকারে খাওয়া। মধু যেকোন ঠান্ডাজনিত সমস্যার জন্য উপকারি।
  • টনসিলের সমস্যা হলে গরম পানির ভাব নেয়া এবং গরম পানিতে গোসল করা উপকারি। এতে গলাব্যথায় আরাম পাওয়া যায়। হিউমিডিফায়ার থাকলে সেটি ব্যবহার করা।
  • প্রতিবার খাবারের পর দাঁত ওমুখ ভালভাবে পরিষ্কার করা। কান ঢেকে রাখা।
  • ভিটামিন সি বেশি করে খাওয়া। 

এসব ঘরোয়া চিকিৎসায় কাজ না হলে ডাক্তার এন্টিবায়োটিক প্রেস্কাইব করতে পারেন। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত এন্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত নয় এবং অবশ্যই এর ফুল কোর্স ঠিকমত শেষ করা উচিত। ক্রনিক বা রিকারেন্ট টনসিল হলে অপারেশন করা প্রয়োজন হতে পারে।

টনসিল ইনফেকশন জটিল আকার ধারণ করলে

টনসিল ইনফেকশন জটিল আকার ধারণ করলেঃ

টনসিল ইনফেকশন যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় অর্থাৎ বছরে নিম্নে দুইবার করে এমনভাবে চার-পাঁচ বছর যাবত চলতে থাকে তবে অপারেশন করে ফেলাই উত্তম ও স্থায়ী সমাধান। এবং অবশ্যই সেটি ডাক্তারের পরামর্শে।

ক্রনিক টনসিলাইটিস এর লক্ষণ হল-

  • টনসিল বড় হয়ে শ্বাসনালীতে ব্লকের সৃষ্টি হয়ে শ্বাসকষ্ট হওয়া, খাবার গিলতেও কষ্ট হওয়া কানে ইনফেকশন হয়ে যাওয়া
  •  ইনফেকশন চারপাশে ছড়িয়ে পুঁজ জমে ফোঁড়া সৃষ্টি হয়ে যাওয়া।
  •  স্লিপ এপনিয়ার মত বিপদজনক সমস্যা হতে থাকলে।
  • টনসিলের জীবানু কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকলে।
  • বয়স্কদের ক্ষেত্রে টনসিল বড় হয়ে গেলে, দীর্ঘদিন ধরে প্রদাহ থাকলে তা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।

উপরোক্ত সমস্যাগুলো হলে আর অবহেলা করা উচিত নয়। ওষুধেও আর কাজ না হলে, টনসিল অপারেশন করে ফেলতে হবে। যেহেতু, টনসিল ইনফেকশন যেকোন সময় যে কারোরই হতে পারে তাই এর লক্ষণগুলো জেনে সতর্ক হওয়া জরুরী। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে শীতকালে ঠান্ডা খাবার বা পানীয় থেকে দূরে রাখা উচিত। গলাব্যথা হলেই এর জন্য ঘরোয়াভাবে সমাধানের জন্য সচেষ্ট হতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে। টনসিল প্রতিরোধে তাই এখন থেকেই ঘরে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

তথ্যসূত্রঃ 

https://www.nhsinform.scot/illnesses-and-conditions/ears-nose-and-throat/tonsillitis/

https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/tonsillitis/symptoms-causes/syc-20378479

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top