রক্তে অ্যালার্জি দূর করার উপায়

রক্তে অ্যালার্জি দূর করার উপায়

আসসালামু আলাইকুম. আশা করছি ভাল আছেন। আপনি কি অ্যালার্জি রোগে আক্রান্ত? কিভাবে অ্যালার্জি থেকে বাঁচবেন, নিজেকে রক্ষা করবেন সেটি জানেন না। আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলটিতে অ্যালার্জি নিয়ে আলোচনা করব। তাই আপনাকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক অ্যালার্জি দূর করতে কি কি করতে হবে।

অ্যালার্জি কারণে আমাদের অনেকেরই ভুগতে হয়। একমাত্র তারাই জানে যে অ্যালার্জি যন্ত্রণা কতটা কষ্টদায়ক । অ্যালার্জি দূর করতে নানা রকম চেষ্টা চলে। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে সহজেই আপনি অ্যালার্জি দূর করতে পারবেন। চলুন জেনে নেই সেই উপায় গুলো কি কি?

রক্তে এলার্জি কি ?

আমরা তো এলার্জি সম্পর্কে প্রায় সকলের শুনেছি। এলার্জি অনেক ধরনের হয়ে থাকে। আজকে আমরা আলোচনা করব রক্তে এলার্জি কি? রক্তে অ্যালার্জি হচ্ছে , রক্তের ইসিনোফিল রক্ত কোষ, যেমন সেত রক্ত, লোহিত রক্ত কণিকার মত অস্থি মজ্জা বা কোন ম্যারো থেকে তৈরি হয়।

ইসোনোফিল হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণু এবং পরজীবী গুলোকে মেরে ফেলে। এরা মূলত সাইটোটক্সিক অনু সাইটোকাইনেজ নিঃসরণের মাধ্যমে এই কাজটি করে থাকে। এছাড়াও ইসোনোফিল পরজীবী এবং ডিম্ব ধ্বংস করে এবং এলার্জি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

রক্তে এলার্জি কেন হয় ?

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে রক্তে এলার্জি হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারন রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা থেকে উঠে এসেছে রক্তে এলার্জি হওয়ার পেছনের মূল কারণ হচ্ছে রক্ত দূষিত হওয়া। বর্তমানে আমরা অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং ভেজাল খাবার অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে , সেটা আমাদের শরীরে খারাপ প্রভাব ফেলছে। 

রক্ত দূষিত হওয়ার পেছনে অস্বাস্থ্যকর খাবার এর পাশাপাশি কিছু বদ অভ্যাস এবং প্রাকৃতিক কারণ ও রয়েছে। যেমন অতিরিক্ত ধূমপান করা , অতিরিক্ত মাদক গ্রহণ করা , এবং যারা অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করেন তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় রক্ত দূষিত বেশি হয়।

আর প্রাকৃতিক কারণে যাদের শরীরের রক্তের দূষণ সমস্যা রয়েছে। লক্ষ্য করে দেখবেন এমন কোন পরিবেশে তারা বেশিরভাগ সময় থাকে যেখানে দূষিত অক্সিজেন অথবা পরিবেশ দূষণ বেশি হয়। অনেক সময় দূষিত পানি এবং দূষিত বাতাসের মাধ্যমে রক্ত দূষিত হতে পারে। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে উক্ত কারণগুলোতে রক্ত দূষিত হয়। এবং রক্ত দূষিত হওয়ার কারণেই রক্তের এলার্জির সৃষ্টি হয়।

রক্তে এলার্জি হলে কি হয়

রক্তে এলার্জি বেশি হলে শরীরে অনেক রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এবং এই সমস্যা গুলি একসময় শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। এবং পরবর্তী সময়ে এই সমস্যাগুলি জটিল আকার ধারণ করার ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। রক্তে এলার্জি হলে শরীরে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। সেগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল।

  • শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অসহনীয় পর্যায়ের চুলকানি।
  • শ্বাসকষ্ট।
  • বুক ভারি হয়ে যাওয়া এবং বুকে চাপ বোধ করা।
  • গলা এবং জিব্বা ফুলে যাওয়া।
  • মুখ ফুলে যাওয়া।
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে গোল গোল চাকা চাকা দাগ হয়ে যাওয়া।
  • শরীরে ফোসা পড়ে যাওয়ার মত মরা চামড়া বা রাশ ওঠা।
  • ঘন ঘন বমি বমি ভাব হওয়া।

আরও পড়ুন

মুখের দাগ দূর করার সহজ উপায় 

রক্তে এলার্জি লক্ষণ

রক্তে এলার্জি হয়েছে কিনা , তা বেশ কিছু লক্ষণের মাধ্যমে বোঝা যায়। নিচে রক্তে এলার্জি হওয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। এবং উক্ত লক্ষণ গুলো যদি আপনার শরীরে দেখা দেয় তাহলে আপনার রক্তে এলার্জি রয়েছে।

  • শরীরের বিভিন্ন অংশে অতিরিক্ত মাত্রায় চুলকানি হওয়া।
  • নাক দিয়ে অতিরিক্ত পানি বের হওয়া।
  • শরীরে গোল গোল এবং চাপাচাকা লাল দাগ হওয়া।
  • তলপেটে ব্যথা এবং পেট কামড়ানো।
  • হজম শক্তি কমে যাওয়া এবং পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা হওয়া।
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
  • বুকে এবং গলায় চাপ অনুভব করা।
  • নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া।
  • বারবার বমি হওয়া।
  • গলা , ঠোঁট , জিব্বা ফুলে যাওয়া।
রক্তে এলার্জি লক্ষণ

রক্তে এলার্জি মাত্রা কত

রক্তে এলার্জি হলে অবশ্যই সেটা আপনাকে পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। রক্তে এলার্জি এমন একটি শারীরিক সমস্যা যেটি খুব সহজে নির্মূল করা সম্ভব হয় না। তাই এটি অবহেলা না করে , পরীক্ষা করে সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে রক্তে এলার্জির মাত্রা কত এটা আপনাকে জানতে হবে। 

যদি রক্তে এলার্জির পরিমাণ বেশি হয় , তাহলে সেখান থেকে পরবর্তীতে আপনার জটিল কোন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। মূলত রক্ত প্রদানের মাধ্যমে এলার্জির মাত্রা পরীক্ষা করানো হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রক্তে এলার্জির মাত্রা ১২০। এবং অপ্রাপ্তদের বয়স্কদের ক্ষেত্রে ১০০ থেকে ১১০ এর মধ্যে।

রক্তে এলার্জি কমানোর উপায়

রক্তে এলার্জি কমানোর জন্য আপনার স্বাভাবিক জীবন যাপনে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সর্বপ্রথম আপনাকে খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। যে খাবারগুলো খাওয়ার ফলে রক্ত দূষিত হয় সেই খাবারগুলো খাওয়া বাদ দিতে হবে। তাই আজ আমরা জানবো কিভাবে আপনি ঘরোয়া কিছু নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে রক্তে এলার্জি খুব সহজেই কমাতে পারবেন। নিচে রক্তে এলার্জি কমানোর বেশকিছু উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

  1. ধূমপান পরিহার করুনঃ ধূমপান আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপানের ফলে রক্তে এলার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই রক্তে এলার্জি কমাতে হলে অবশ্যই আপনাকে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে।
  2. শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমানঃ শরীরের অতিরিক্ত পরিমাণে ওজন এবং চর্বি থাকলে রক্তে এলার্জির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সেজন্য রক্তে এলার্জি কমানোর জন্য অবশ্যই আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে হবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  3. মসলা জাতীয় খাবার পরিহার করুনঃ খাদ্যে অতিরিক্ত মসলা ব্যবহার করলে শরীরের রক্তে এলার্জির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। সেজন্য রক্তে এলার্জি কমাতে অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে।
  4. টক দইঃ রক্তে এলার্জির মাত্রা কমাতে টক দই বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই রক্তে এলার্জির মাত্রা কমাতে নিয়মিত এবং পরিমাণ মতো টক দই খান।
  5. এলার্জি যুক্ত খাবার পরিহার করুনঃ রক্তের এলার্জি কমানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে এলার্জি যুক্ত খাবার গুলো খাওয়া বাদ দিতে হবে। এলার্জি যুক্ত খাবার খবর ফলে রক্তে এলার্জি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সেজন্য যে খাবারগুলো খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে অ্যালার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পায় সেই খবরগুলো পরিহার করতে হবে।
  6. শারীরিক ব্যায়াম করুনঃ রক্তে এলার্জির মাত্র কমানোর জন্য আপনি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন। নিয়মিত সকালে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ব্যায়াম করার ফলে শরীরের দূষণের মাত্রা কমবে। এবং নিয়মিত ব্যায়াম রক্তে এলার্জি কমানোতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
  7. অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করুনঃ রক্তে এলার্জির পরিমাণ কমানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করতে হবে। এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে। রক্তে এলার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  8. অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ পরিহার করুনঃ রক্তে এলার্জির পরিমাণ কমানোর জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে দূরে থাকতে হবে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বলতে যেখানে বায়ু দূষণ হয় । ধুলাবালি বেশি , এই স্থানগুলো পরিত্যাগ করুন।
  9. লবণ খাওয়া কমানঃ অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে রক্তে এলার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সেজন্য অতিরিক্ত লবণ খাওয়া ত্যাগ করতে হবে। তাহলে রক্তে অ্যালার্জির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যাবে।
  10. গ্রিন টি পান করুনঃ রক্তে এলার্জির মাত্রা কমাতে চাইলে গ্রিন টি ভালো একটি মাধ্যম হতে পারে। রক্তের এলার্জির মাত্রা কমাতে গ্রিন টি বেশ কার্যকরী। তাই রক্তে এলার্জির মাত্রা কমাতে নিয়মিত গ্রিন টি পান করুন।

রক্তে এলার্জি কমানোর ওষুধ

রক্তে এলার্জি কমানোর ঔষধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে হবে। কখনোই আমরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এলার্জির ওষুধ খাব না কারণ এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। নিম্নে কিছু ওষুধের নাম দেয়া হলোঃ

  • Alatrol
  • Acitrin
  • Atrizin
  • Nosemin
  • Cetizin
  • Rizin
  • Dyzin

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top